মুরারই ২ ব্লকের রুদ্রনগর পঞ্চায়েতের প্রধান রাকেশ ভূঁইমালির (বাঁ দিকে) ও তার বাড়ির (ডান দিকে) ছবি।
মাত্র তেইশ বছর বয়সে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের দায়িত্ব। নতুন প্রজন্ম যাতে রাজনীতিতে আসে সেই বার্তা দিতেই মুরারই ২ ব্লকের রুদ্রনগর পঞ্চায়েতে তরুণ রাকেশ ভুঁইমালিকে প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানালেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুক্রবার খামবন্দি নাম নিয়ে হাজির হন এক তৃণমূল নেতা। পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তৃণমূল। বহুদিনের রাজনীতিবিদ পঞ্চায়েত সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েতে। খাম খুলতেই দেখা যায় এই বছর প্রথম রুদ্রনগর গ্রাম থেকে প্রথম বার জয়লাভ করা রাকেশ ভুঁইমালির নাম রয়েছে প্রধান হিসেবে। অনেকের সঙ্গেই রাকেশ নিজেও অবাক হয়ে যান। তৃণমূলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের পাঠানো নাম বলে তাঁকেই প্রধান হিসেবে মেনে নেন সকলে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানান, রাকেশই হয়তো মহকুমা বা জেলার সর্বকনিষ্ঠ প্রধান। ছাত্র-যুব দের বার্তা দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে তৃণমূল নেতৃত্বের মত।
অত্যন্ত দুঃস্থ পরিবারের ছেলে রাকেশ। মা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে কলেজে ভর্তি হলেও টাকার জন্য পড়াশোনা হয়নি। সকালে বাড়ির জন্য রান্না করে কখনও বিড়ি কারখানায়, কখনও দিনমজুরের কাজ করতেন। মাস চারেক আগে বিয়ে করেছেন। এ দিন প্রধানের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল ছোট্ট একটি ঘর। টিনের ছাউনি থাকলেও ভেঙে গিয়েছে। কোনও রকমে ছেঁড়া ত্রিপল দিয়ে বসবাস। বাড়ির দরজাও টিন দিয়ে তৈরি।
আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন? উত্তরে রাকেশ বলেন, ‘‘বাড়ির টাকা ঢুকলে এই ভাবে কষ্ট করে কেউ থাকে? বেশ কয়েকবার আবেদন করেছিলাম। কোনA সমস্যার জন্য বাড়ি পাইনি।’’ এ বারে কি প্রধান হয়ে নিজের বাড়ি নিজেই নিতে পারবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আরও কয়েক বছর এ ভাবেই থাকতে হবে। কেননা পঞ্চায়েতের বহু গ্রামের মানুষজনের এই ছাদটুকুও নেই। তাঁদের ব্যবস্থা না করে দিলে অনেকেই প্রধানের চেয়ারের দিকে আঙুল তুলবেন। যে প্রসাদ দাদুর জন্য এই জায়গায় পৌঁছলাম, তাঁর আদর্শ ও ভাবমূর্তিতে দাগ লাগতে দেব না।’’
গ্রামের মানুষজনদের একাংশ জানান, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও প্রাক্তন রুদ্রনগর পঞ্চায়েতের প্রধান শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ই রাকেশের ‘প্রসাদ দাদু’। তিনি বলেন, ‘‘জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছে রাকেশকে প্রধান হিসেবে। শিক্ষিত ও সৎ ছেলে। কষ্ট করে মানুষ হয়েছে। যে কোনও সাহায্যে আমরা পাশে থাকব।’’ এলাকাবাসীদের একাংশের আশা, অল্প বয়সী ও দুঃস্থ প্রধান এলাকার মানুষজনের সুবিধে অসুবিধে বুঝবেন।
রাকেশ বলছেন, ‘‘দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করব। সরকারি প্রকল্পের সুবিধে প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দেব।’’ তৃণমূলের মুরারই ২ ব্লকের সভাপতি আফতাবুদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মকে দলের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য রাকেশকে প্রধান করা হয়েছে।’’