শতাব্দী রায় (বাঁ দিকে)। মহুয়া মৈত্র (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।
দল চুপ। তবে দলীয় সতীর্থ তথা কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়ালেন আর এক তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। শুক্রবার বীরভূমের তারাপীঠে বীরভূমের তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য, ‘‘মহুয়ার জনপ্রিয়তা বেশি। তাই তাঁকে নিশানা করছে বিজেপি।’’ সতীর্থের দৃঢ় মানসিকতারও প্রশংসা করেন শতাব্দী। এর আগে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মহুয়ার।
তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত মহুয়া-প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। প্রকাশ্যে অন্তত দলকেও মহুয়ার পাশে দাঁড়াতে দেখেননি কেউ। এই প্রেক্ষাপটে মহুয়ার পাশে দাঁড়ালেন শতাব্দী। মহুয়াকে ‘স্ট্রং পার্লামেন্টারিয়ান’ হিসাবে অভিহিত করে শতাব্দী বলেন, ‘‘মহুয়া খুব স্ট্রং মহিলা এবং স্ট্রং পার্লামেন্টারিয়ান (দৃঢ় চরিত্রের মহিলা এবং কড়া সাংসদ)। খুব জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। মহুয়ার জনপ্রিয়তাও একটা কারণ, এত ভাবে আক্রমণ করার বলে আমার মনে হয়। এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে বলে অনেক বেশি আক্রমণ ওকে লক্ষ্য করে চলছে। এথিক্স কমিটি যে প্রশ্ন করেছে তাতে আপত্তি তো বিরোধীরা সবাই করেছেন, একা মহুয়া তো নয়!’’
শুধু মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোই নয়, শতাব্দীর কথায় উঠে এসেছে এথিক্স কমিটির সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে নিজের অসন্তোষও। শত্বাদী বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি যে নিয়মকানুন দেখাচ্ছে সেটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। শুধুমাত্র মহুয়া অ্যাটাকিং বলে, মহুয়া বিরোধিতা করছে বলে দু’দিনের মধ্যে ওঁকে ডাকা হোক, এটা ঠিক নয়। যাঁদের ১০ বছর ধরে পড়ে আছে, তাঁদের কবে ডাকা হবে?’’
বৃহস্পতিবার লোকসভার এথিক্স কমিটির ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথমে মহুয়া, তার পিছন পিছন বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে বেরিয়ে আসেন কমিটির বিরোধী সাংসদ সদস্যরা। মহুয়া অভিযোগ করেন, ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কিছু আপত্তিকর প্রশ্ন তাঁকে করা হয়েছে যা অনৈতিক, ব্যক্তিগত এবং অশালীন। যদিও গোটা পর্বে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চুপ তৃণমূল নেত্রী। প্রতিক্রিয়া মেলেনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। যদিও ফিরহাদ এবং কুণালের পাশে দাঁড়ানোকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। খুব সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘মহুয়া যে হেতু বেশি ভোকাল, তাই এ রকম করা হচ্ছে।’’একই সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘মহুয়া নিজে যথেষ্ট সাবলীল এই বিষয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য।’’ আর কুণাল দলীয় লাইন জানানোর পাশাপাশিই প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়াকে ডাকতে এথিক্স কমিটির ‘তাড়াহুড়ো’ নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, “এথিক্স কমিটির এত তাড়া কেন? মহুয়া তো বলেননি যে, তিনি যাবেন না।’’ এই প্রেক্ষিতে সরাসরি সতীর্থের পাশে দাঁড়ালেন শতাব্দী।
প্রসঙ্গত, এথিক্স কমিটিতে রয়েছেন মোট ১১ জন সদস্য। তার মধ্যে ৫ জন বিরোধী শিবিরের। ৬ জন বিজেপির। বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূলের কোনও সাংসদ প্রতিনিধি নেই। বিরোধীদের তরফে সদস্য হিসাবে রয়েছেন কংগ্রেসের দু’জন, জেডিইউ, সিপিআই এবং বিএসপির এক জন করে সাংসদ। সূত্রের খবর, বৈঠকে আগাগোড়া বিরোধী সাংসদেরা মহুয়ার পাশেই দাঁড়ান।