(বাঁ দিকে) লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
‘ব্যক্তিগত এবং অনৈতিক’ প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তার পর লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, এথিক্স কমিটির বৈঠকে মৌখিক ভাবে তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’ করা হয়েছে। লোকসভার স্পিকারের কাছে এক জন মহিলা সাংসদ হিসাবে ‘সুরক্ষা’ও চেয়েছেন মহুয়া। তাঁর অভিযোগের তির এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকরের দিকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লোকসভার স্পিকারকে তিন পাতার একটি চিঠি লেখেন মহুয়া। তাতে এক ডজন পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, যে কায়দায় তাঁকে প্রশ্ন করেছেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান, তা মর্যাদাহানিকর। তাঁর আরও অভিযোগ, তাঁকে অপ্রাসঙ্গিক, ব্যক্তিগত সমস্ত প্রশ্ন করা হতে থাকে। মহুয়ার দাবি, তাঁর পাশাপাশি কমিটির আরও পাঁচ জন সদস্য তাতে আপত্তি জানান। কিন্তু সে সবে কর্ণপাত না করে চেয়ারম্যান ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন করে যেতেই থাকেন বলে অভিযোগ।
‘ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা’র অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার বক্তব্য জানার তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল এথিক্স কমিটি। বৈঠকের মাঝপথে সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে মহুয়া বলেন, ‘‘এটা কী ধরনের বৈঠক? ওঁরা নোংরা প্রশ্ন করছেন।’’ মহুয়ার অভিযোগ, বৈঠকে তিনি গালে হাত রেখেছিলেন। তা নিয়েও ‘বাজে’ কথা বলা হয়েছে। মহুয়াকে যে ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিএসপির সাংসদ দানিশ আলি।
কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে মহুয়াকে? চিঠিতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ লিখেছেন, তিনি গত রাতে কার সঙ্গে, কত বার ফোনে কথা বলেছেন, তার কল রেকর্ডের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান কমিটির চেয়ারম্যান। লোকসভার স্পিকারের উদ্দেশে মহুয়া লিখেছেন, ‘‘দেশের শীর্ষ আদালত বলেছে, ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখা নাগরিকের অধিকার। সেখানে আমায় ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েই জানতে চাওয়া হয়।’’ তিনি তাঁর প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন সাংসদ।
লোকসভার স্পিকারের কাছে মহুয়া আর্জি জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বক্তব্য হলফনামা আকারে জমা দেবেন। সেটাই কমিটিতে নথিভুক্ত করা হোক। যাতে আর এই রকম অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে সে কারণেই তিনি হলফনামা আকারে সবটা জানাতে চান বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
প্রসঙ্গত, এথিক্স কমিটি মহুয়াকে প্রথমে ডেকেছিল ৩১ অক্টোবর। তার পর মহুয়া চিঠি দিয়ে জানান, তাঁর সংসদীয় এলাকায় বিজয়া সম্মিলনী রয়েছে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত থাকবেন। ৫ নভেম্বরের পর যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে তিনি হাজিরা দিতে পারবেন। তার পর ফের তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে ২ নভেম্বর ডেকে পাঠানো হয়। মহুয়া গত মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে এথিক্স কমিটিকে জানান, তিনি হাজিরা দেবেন। সেই সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি। সেই প্রশ্নমালারও বেশ কিছু প্রশ্ন স্পিকারকে লেখা চিঠিতেও তুলেছেন মহুয়া। তার মধ্যে অন্যতম, কেন ২০২১ সালের জুলাই মাসের পর থেকে এথিক্স কমিটির বৈঠক হয়নি? কেন পেগাসাস আড়ি পাতার অভিযোগ খতিয়ে দেখেনি এথিক্স কমিটি? তাতে কি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার বিষয় ছিল না?
মহুয়া এ-ও লিখেছেন, লোকসভায় ৭৮ জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনিও অন্যতম। কিন্তু তাঁর সম্মানহানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ এথিক্স কমিটির সামনে হাজিরা দেন মহুয়া। প্রথমে সংসদের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কয়েক জনের বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়। তার পর মহুয়ার বয়ান নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ-পর্বের প্রায় আড়াই ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর একটি বিরতি হয়। তার পর আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় বলে জানা যায়। তখনই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মহুয়া-সহ বিরোধী সাংসদেরা।