সেই মাঠে ‘দখলদারদের’ খোঁড়া গর্ত বুজিয়ে প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি দখলদারির বিরুদ্ধে সম্প্রতি সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও তৃণমূলের ঝালদার এক নেতার বিরুদ্ধে তুলিনে খেলার মাঠ বেদখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এককাট্টা হয়ে তৈরি করেছেন ‘মাঠ বাঁচাও কমিটি’। এই ঘটনায় অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। বুধবার পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘দল এই ধরনের ঘটনাকে কখনও প্রশয় দেয় না। ঝালদার তুলিনে ঠিক কী ঘটেছে তা জানতে দলীয় স্তরে বিস্তারিত ভাবে খোঁজ নেওয়া হবে।’’
যাঁকে নিয়ে বিতর্ক, সেই শেখ সুলেমান তৃণমূলের ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি। বর্তমানে তিনি দলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি গোড়া থেকেই বলে আসছি ওই জমি কেনা হয়েছে। বেদখলের প্রশ্নই ওঠে না। আইনি পথেই এর মোকাবিলা করা হবে। তার প্রস্তুতিও চলছে।’’
এ দিকে ওই মাঠ বাঁচানোর লড়াই জারি থাকবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তুলিন ইউনাইটেড ক্লাবের সম্পাদক যোগেশ্বর মাহাতো। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘মাঠ বাঁচাতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’
তবে ওই বিতর্ক থেকে দল ও সংগঠনকে সরিয়ে রাখতে চাইছেন নেতৃত্ব। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আনসারি বলেন, ‘‘এটা সুলেমানের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সংগঠনের সঙ্গে ওই ঘটনার কোনও যোগ নেই।’’
তবে ওই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘ছেলেবেলা থেকে তুলিনের ওই জমিকে খেলার মাঠ হিসেবেই দেখে আসছি। সেই মাঠ দখল করার চেষ্টার তীব্র নিন্দা করছি। এলাকাবাসী ওই মাঠকে বাঁচাতে এককাট্টা হয়ে কমিটি গড়েছেন। তাঁদের প্রতিবাদের সেই ভাবনাকে কুর্নিশ জানাই।’’
বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূলের রাজত্বে জেলায় জেলায় একজন করে শেখ শাহজাহান তৈরি করা হয়েছে। জমি দখলের ভাগ ওই দলের উপরতলাতেও যাচ্ছে।’’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বা সুলেমান এই অভিযোগ মানতে চাননি।
ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার। ঝালদা-তুলিন মূল রাস্তার গা ঘেঁষে থাকা ওই মাঠের দখলদারির অভিযোগকে ঘিরে দু’পক্ষের গন্ডগোল বাধে। উভয়পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তোলে। পথ অবরোধ হয়। শেষমেশ পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মঙ্গলবার সেই মাঠ বাঁচানোর দাবিতে একত্রিত হন তুলিন-সহ আশপাশের গ্রামগঞ্জের মানুষজন। গঠিত হয় ‘মাঠ বাঁচাও কমিটি’। তুলিনের হাটবাগানে সভা করার পরে লোকজন ওই মাঠে এসে জমায়েত করেন। মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে খোঁড়া গর্ত তাঁরা বুজিয়ে দেন। এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতদিন নজরদারি চালানো হচ্ছে।