আলোচনা: সিউড়িতে দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির বৈঠক। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যার ‘ক্ষোভের’ প্রসঙ্গ উঠে এল বীরভূম তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে। রবিবার সিউড়িতে দলের জেলা কার্যালয়ে হওয়া ওই বৈঠকে উঠে এল গোষ্ঠী-কোন্দলের প্রসঙ্গও। কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যে ‘মতপার্থক্যের’ কথাও উঠে এসেছেন বৈঠকে।
এ দিন দুপুর দুটো থেকে বৈঠকে বসেন কোর কমিটির নয় জন সদস্য। বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন চক্রবর্তী। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক। জেলায় কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে সপ্তাহে একটি করে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে গত সপ্তাহে বোলপুরের পরে এই সপ্তাহে সিউড়িতে বৈঠক হল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে অনুব্রত-কন্যাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁর ক্ষোভের কারণগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কোর কমিটি। শুক্রবার রাতে বোলপুরের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মীকে বাড়িতে ডেকে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সুকন্যা। তাঁর অভিযোগ ছিল, অনুব্রতের জেলবন্দি থাকার সময়ে দলের কোনও নেতা তাঁর পাশে নেই। জেলা সভাপতির মেয়ে এমন অভিযোগ তোলায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। বিশেষ করে যেখানে কালীঘাটের বৈঠকে ক’দিন আগে মমতা নির্দিষ্ট করে সুকন্যার দিকে খেয়াল রাখার কথা বলে দিয়েছিলেন কোর কমিটির সদস্যদের। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতি তৈরি না হয় অর্থাৎ অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে সুকন্যা যাতে নিজেকে একা বা অসহায় মনে না করেন, সেই জন্য নিয়মিত পালা করে কোর কমিটির সদস্যেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন ও সহযোগিতা করবেন বলে এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে।
সিউড়ি পুরসভায় বেশ কয়েক জন তৃণমূল কাউন্সিলর বর্তমান পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে সুর চড়াচ্ছেন। প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ৩১ তারিখ পুরবোর্ডের মিটিংয়েই এলাকা উন্নয়নের টাকা না-পাওয়া গেলে পুরসভা ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সিউড়ি পুরসভায় কাউন্সিলরদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের বিষয়টি এ দিনের আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে।
খয়রাশোল ব্লক নিয়েও চিন্তায় রয়েছে কোর কমিটি। সেখানকার ১০টি অঞ্চলের সভাপতিদের অধিকাংশই খয়রাশোল ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। বর্তমান কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষকে খয়রাশোল ব্লকের সভাপতির আপত্তিতে ব্লক পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে এই সমস্যার সমাধানসূত্র খোঁজারও চেষ্টা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সিউড়ির বিধায়ক তথা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী এ দিন বলেন, “খয়রাশোলে কোর কমিটি যাঁকে প্রয়োজন বলে মনে করবে, তাঁকেই পাঠাবে। সুদীপ্ত আমাদের দলের অনুগত সৈনিক। প্রয়োজন হলে উনি যাবেন।”
অনুব্রতহীন বীরভূমে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যেও। সেই সব কিছু মিটিয়ে নেওয়ার বিষয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এ দিনের বৈঠক। যদিও প্রকাশ্যে মতপার্থক্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কোর কমিটির সদস্যরা। মতপার্থক্য সম্পর্কে পর্যবেক্ষক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “বৃহৎ সংসার হলে ও-সব একটু আধটু হয়। এগুলো কোনও ব্যাপার নয়। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি। আরও এগিয়ে যাব।” বিকাশের কথায়, ‘‘সামনে নির্বাচন আসছে, যেখানে যেখানে অব্যবহৃত তহবিল পড়ে রয়েছে, সেখানে দ্রুত টেন্ডার করে সেগুলি ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। সংগঠনে কোনও পরিবর্তন হয়নি। যা আছে তাই থাকবে।”