১৩ মান্ডির মধ্যে চালু মোটে তিন

কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মান্ডি চালুর উদ্দেশ্য ছিল এক একটি এলাকায় সুসংহত কেন্দ্রীয় বাজার গড়ে তোলা। কিন্তু নানা কারণে তা সর্বত্র সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর স্বীকারোক্তি, মান্ডি তৈরির আগে স্থান নির্বাচনে আরও খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:২১
Share:

সুনসান: চালু হয়নি পুঞ্চার কিসান মান্ডি। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়া জেলায় ১৩টি কিসান মান্ডি তৈরি হলেও চালু হয়েছে মোটে তিনটি। বাকি ১০টির মধ্যে কয়েকটি মান্ডি পুজোর মধ্যেই চালু করতে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন।

Advertisement

সম্প্রতি জেলাশাসক বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুর্গাপুজোর মধ্যে দু’টো কি তিনটে এবং পুজোর পরে অন্তত আরও চার-পাঁচটি মান্ডি কী ভাবে চালু করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘১৩টি মান্ডির মধ্যে মানবাজারের মান্ডি সব থেকে ভাল চলছে। এ ছাড়া কাশীপুর ও পাড়াতেও কিসান মান্ডি চালু করতে পারা গিয়েছে। বাকি ১০টি মান্ডি নানা কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। সবাই মিলে এক সাথে উদ্যোগ নিলে আশা করছি পুজোর আগে আরও কয়েকটা মান্ডি চালু করা সম্ভব হবে।’’

Advertisement

রাজ্য সরকার চেয়েছিল, কিসান মান্ডির হাত ধরে গ্রামীণ বাজারের হাল ফিরুক। প্রতিটি ব্লক এলাকায় একটি করে সুসংহত বাজার গড়ে উঠলে চাষি এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী এ জেলায় কাজ হয়নি।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কোটি কোটি টাকা খরচ করেও মান্ডি চালু না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি। জেলায় এলেই তিনি বিভিন্ন সময়ে মান্ডি চালুর জন্য জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দিয়েছেন। মানবাজার, বরাবাজার, পুঞ্চা, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, ঝালদা, জয়পুর, হুড়া, কাশীপুর, পাড়া, সাঁতুড়ি, নিতুড়িয়াতে কয়েক বছর আগে মান্ডি নির্মাণ হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র তিনটি মান্ডি চালু হয়েছে। এতে কৃষি বিপণন দফতরের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও অস্বস্তিতে রয়েছে।

কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মান্ডি চালুর উদ্দেশ্য ছিল এক একটি এলাকায় সুসংহত কেন্দ্রীয় বাজার গড়ে তোলা। কিন্তু নানা কারণে তা সর্বত্র সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর স্বীকারোক্তি, মান্ডি তৈরির আগে স্থান নির্বাচনে আরও খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল। কয়েকটি ব্লকে বাজার থেকে মান্ডি বেশ দূরে। আবার কয়েকটি মান্ডির যোগাযোগ ব্যবস্থাও সুগম নয়। তাই ক্রেতাদের ওই সব মান্ডি টানতে পারছে না। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ক্রেতা না পেলে সাধারণ চাষিরা কাকে বিক্রি করবেন?’’ তাঁর মতে, মান্ডিতে কৃষি সম্পর্কিত অফিস এবং অন্যান্য ব্যবসার খোলা বাজার থাকলে সারাদিন মানুষজন আনাগোনা করতে পারবেন। তা না হওয়ায় কার্যত মান্ডিগুলি গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে।

বাস্তব ছবিটা কেমন? বরাবাজারের বাজার এলাকা থেকে প্রায় দু’কিমি দূরে মান্ডি রয়েছে। বছরখানেক আগে কৃষি দফতরের অফিস এখানে স্থানান্তরিত হয়। স্থানীয় ব্লক প্রশাসন কয়েকবার চেষ্টা করেও মান্ডি চালু করতে পারেননি। সাঁতুড়িতে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছেই কিসান মান্ডি। সাঁতুড়ি এবং নিতুড়িয়ার দু’জায়গাতেই কিসান মান্ডিতে সবুজ সাথী সাইকেল রাখা রয়েছে।

পুঞ্চায় থানার পাশেই মান্ডি রয়েছে। অথচ সেখানে আনাজের বাজার বসানো সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীরা মান্ডির ভিতরে স্টল ভাড়া নিয়েছেন, কিন্তু রাস্তার ধারে বসেই তাঁরা বিক্রি করে যাচ্ছেন। ওই মান্ডির ভিতরে একটি মিষ্টির দোকান এবং একটি জুতোর দোকান রয়েছে। দোকানদারদের কথায়, ‘‘ভিতরে ক্রেতা আসে না। কয়েকমাস ধরে টানা লোকসান চলছে।’’

জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক সুধীর মাঝির কথায়, ‘‘মান্ডি চালুর জন্যে আমরা নিয়মিত স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আশা করছি পুজোর আগে কয়েকটা মান্ডি চালু করা যাবে।’’

জেলাশাসক বলেন, ‘‘মান্ডি চালুর জন্যে প্রয়োজনে স্থানীয় চাষি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিডিওদের আলোচনায় বসতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’ জেলাশাসকের আশা সমস্ত স্তরের প্রতিনিধিরা মিলে চেষ্টা করলে পুজোর আগে কয়েকটি মান্ডি চালু করা অসম্ভব নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement