বুধবার বিশ্বভারতীর এস্টেট অফিস থেকে সমিতির যাবতীয় জিনিসপত্র সদস্যদের হাতে তুলে দিয়ে দায়ভারমুক্ত হলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতীতে আগেই গৃহহীন হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের হাতে গড়া শতাব্দী প্রাচীন আলাপিনী মহিলা সমিতি। এ বার পাকাপাকি ভাবে ওই সমিতিকে উচ্ছেদ করা হল। বুধবার বিশ্বভারতীর এস্টেট অফিস থেকে সমিতির যাবতীয় জিনিসপত্র সদস্যদের হাতে তুলে দিয়ে দায়ভারমুক্ত হলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে ভাবে আলাপিনী মহিলা সমিতিকে উৎখাত করা হল বিশ্বভারতী থেকে, তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ সমিতির সদস্য-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও আশ্রমিকেরা। সমিতির সদস্যরা জানিয়েছেন, নিজেদের কার্যালয় ফিরে পেতে আগামী দিনেও তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
১৯১৬ সালে শান্তিনিকেতনের আশ্রমের মহিলাদের নিয়ে এই মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সমিতির নামকরণ করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম দিকে প্রতিমা দেবী, দ্বিজেন্দ্রনাথের পত্নী কিরণমালা দেবী ও পুত্রবধূ হেমলতা দেবী ছিলেন সমিতির প্রধান। পরবর্তী কালে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মা প্রয়াত অমিতা সেন দীর্ঘ দিন এই আলাপিনী মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। মূলত শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের গান শেখানো, খাওয়ানো ছাড়াও একাধিক সামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন এই মহিলা সমিতির সদস্যরা। প্রতি মাসে দু’বার অধিবেশন ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য মেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এই মহিলা সমিতি।
গত বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিস জারি করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আলাপিনীর কার্যালয় ‘নতুনবাড়ি’ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। চলতি বছরের বছরের প্রথম দিনেই সিল করে দেওয়া হয় ‘নতুনবাড়ি’। এর পর বহু আন্দোলন, প্রতিবাদ-মিছিল করলেও কর্তৃপক্ষকে তাঁদের অবস্থান থেকে টলানো যায়নি। মাঝের সময়ে যাবতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা গেটের সামনে করছিলেন মহিলা সমিতির সদস্যরা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর আরও একটি নোটিস জারি করে মহিলা সমিতির সদস্যদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় বেঁধে দেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তার পর বুধবার পাকাপাকি ভাবে উৎখাত করা হল আলাপিনী মহিলা সমিতিকে।
এ বিষয়ে আলাপিনী মহিলা সমিতির সহ-সম্পাদিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কার্যালয় ফিরে পেতে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে বহু বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাননি। আমরা আমাদের অফিসঘর ফিরে পেতে আগামী দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।