বিদ্যাসাগরবাবুরা। নিজস্ব চিত্র
প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় মামলা হল বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী-সহ দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে দাবি করেছে বিজেপি। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পুলিশ দাবি করেছে, অনুমতি না নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ ঢোকায় মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার হুড়ার কেশরগড় ও জবড়রা হাইস্কুলে চলা প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগরবাবু, বিজেপির জেলা সম্পাদক বিবেক রঙ্গা, হুড়ার বাসিন্দা তথা দলের সংখ্যালঘু মোর্চার নেতা আবদুল আলিম আনসারি ও জেলা সহ-সভাপতি ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দলের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী।
পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দু’টি প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ গিয়ে ‘রাজনৈতিক কার্যকলাপ’ সংগঠিত করেছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি আদেশ অমান্য করা, অনুমতির তোয়াক্কা না করে প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ প্রবেশ করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। পাশাপাশি, জাতীয় বিপর্যয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। মামলা করা হয়েছে মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে।
জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, “অনুমতি না নিয়ে ওঁরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন-এ ঢুকেছিলেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে।”
বিদ্যাসাগরবাবুর প্রতিক্রিয়া, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। কোয়রান্টিন-এ থাকা কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা্য় রয়েছেন শুনে তাঁদের দেখতে গিয়েছিলাম। নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসি। পরে শুনি, আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।” পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর বক্তব্য, ”সর্বত্র এটা হচ্ছে। আমরা নিয়ম মেনে রাস্তায় নামলেও মামলা করা হচ্ছে। পরিচিত শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও মামলায় জড়াতে হচ্ছে।”
পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল বলে মামলা করা হয়েছে, এমনটা নয়। অনুমতি না নিয়ে ওঁরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন-এ গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, যাঁরা সেখানে ঢুকেছিলেন তাঁদের মাধ্যমেও তো সংক্রমণ ছড়াতে পারে।”
বিদ্যাসাগরবাবুর পাল্টা দাবি, “তৃণমূল নেতারা সমস্ত জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের বেলায় সাত খুন মাফ। কাশীপুরের বিধায়ক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন-এ গিয়ে জিনিস দিচ্ছেন। কোথাও কোনও মামলা হচ্ছে না।” এ প্রসঙ্গে কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার মন্তব্য, ‘‘যেখানে ঢোকা উচিত নয়, সেখানে আমি বা দলের কেউই ঢুকিনি। পরিযায়ী শ্রমিকেরা সমস্যার কথা জানানোয়, সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন-এর বাইরে থেকে তাঁদের সহায়তা দিয়েছি।’’
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন-এ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার নেতা আবদুল আলিম আনসারির বক্তব্য, ‘‘অনেকেই সে দিন ছবি তুলেছিলেন। আমাদের হাতে দলীয় পতাকা রয়েছে, এমন ছবি কেউ দেখাতে পারবেন?”