মেনকা বণিক। —নিজস্ব চিত্র।
কত বার বলেছি ছেলেকে, ‘এ সব বন্ধ কর’। কোনও কথাই কানে তোলেনি। শুনলে, আজ এত বড় সর্বনাশ হত না! সব শেষ হয়ে গেল!
সোমবার রাত তখন প্রায় সাড়ে ৯টা। আমি বাড়িতেই ছিলাম। টিভি দেখছিলাম। একই বাড়িতে পাকা বাড়ির সঙ্গেই অ্যাসবেস্টসের ঘরে আমি আর আমার স্বামী থাকতাম। অন্য অংশে ছেলেরা। আমি আর ওদের বাবা এক মাস করে দুই ছেলের কাছে খাওয়া-দাওয়া করতাম।
রাতে হঠাৎ বিকট আওয়াজ, আগুনের ঝলক। ঘর থেকে ছুটে বেরোতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়লাম। আর কিছু মনে নেই। শুনলাম, পাড়ার লোকজন অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে পাশের বাড়িতে নিয়ে যান। মঙ্গলবার সকালে যখন ঠিকঠাক জ্ঞান এল, খবর পেলাম সব শেষ! স্বামী, ছোট নাতি-নাতনিগুলোকে শেষ বার চোখের দেখাও দেখতে পেলাম না। এ আফসোস সারা জীবনেও যাবে না!
ঘটনার সময়ে দুই বৌমা যে যার ঘরে ছিল। দু’জনের সাড়ে ছ’মাসের দুটো বাচ্চা। কেউ বাঁচেনি। শুনলাম, বিস্ফোরণে পরে আমার স্বামী বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে বাড়িতে ঢুকে বাচ্চাদের বার করে আনতে গিয়ে আগুনে আটকে পড়ে উনিও শেষ হয়ে গেলেন। বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত আর ছোট ছেলে তুষার বাড়ির বাইরে ছিল বলে বেঁচে গিয়েছে। ছোট ছেলেটা এ সব কারবারে জড়ায়নি বলেই জানি। এখন শুনলাম, পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। বাড়িতে পুলিশের লোকজন মাঝে মাঝেই আসত। কী জন্য, তা অবশ্য জানি না। বছর দুয়েক আগে পুলিশ এসে বাজি তৈরির সব মালপত্র নিয়ে চলে গিয়েছিল। মাস তিনেক ব্যবসা বন্ধ ছিল। ভেবেছিলাম, যাক, এই বিপদের কারবার আর হবে না। কিন্তু চন্দ্রকান্ত ফের বাজি তৈরি শুরু করেছিল। মাঝে মাঝে এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারাও এসে বাজি তৈরি করত বলে দেখেছি।ছেলের ভুলের জন্য সব শেষ হয়ে গেল!