নেমেছে পারদ। রোদ পোয়াচ্ছে পানকৌড়ির দল। সিউড়ির তিলপাড়া জলাধারে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে বাতাসে শিরশিরে আমেজ টের পেয়েছিলেন জেলাবাসী। জামা-কাপড় বের করে, লেপ-কম্বল রোদে দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসে সেটা আরও জোরালো হল। শনিবার রাত থেকেই শীত অনুভূত হচ্ছিল। রবিবার সকাল থেকে ঠান্ডার যে কামড় সকাল-সন্ধ্যা অনুভূত হচ্ছে, তাতে শীতের অল্পবিস্তর গরম পোশাক ছেড়ে ভারী পোশাকের খোঁজ শুরু হয়েছে। এ দিন জেলার তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই মরসুমে সর্বনিম্ন।
উত্তরবঙ্গে শীত পড়েছে জাঁকিয়ে। দার্জিলিং-এর তাপমাত্রা ছুঁয়ে গিয়েছে ৭-৮ ডিগ্রিতে। গোটা উত্তর ভারত কাঁপছে ঠান্ডায়। কিন্তু, আসি আসি করেও শীত যেন দক্ষিণবঙ্গকে এড়িয়ে চলছিল। নিম্নচাপের মেঘ কাটতেই আলিপুর আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে, সোমবার থেকে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা নামাবে আগামী চার দিন। বলা হয়েছিল, কলকাতায় ২০ ডিগ্রি, রাঢ় বঙ্গের জেলাগুলির তাপমাত্রা নামতে পারে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। বীরভূমে রবিবারই সেই পূর্বাভাস সত্যি হয়েছে।
শান্তিনিকেতন আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, রবিবারের আগে পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ একদিনই ছুঁয়েছিল ১৫ ডিগ্রি। সেটা নভেম্বরের ৫ তারিখ। ওই সময়টায় টানা চার দিন তাপমাত্রা ছিল ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে। তার পরেই সেটা ১৭ ডিগ্রি পেরিয়ে যায়। গত শুক্র এবং শনিবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটাই হুট করে সাড়ে তিন ডিগ্রি নেমেছে রবিবার সকালে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭-এর আশপাশে। রোদ থাকলেও দিনভর হাওয়া চলেছে।
এখন শীত কত দিন স্থায়ী হবে, এ সব না ভেবে অনেকেই এই সময়কে উপভোগ করতে চান। সিউড়ি শহরের কলেজ পড়ুয়া অমিত চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “মোটরবাইক চালালেও এর আগে শুধু সকাল, সন্ধ্যায় একটু ঠান্ডা লাগছিল। কিন্তু, রবিবার বাড়ি থেকে বেরোলে গায়ে গরম পোশাক চড়াতে হচ্ছে। তবে এ ঠান্ডা উপভোগ্য।’’
শীত আসার অনেকগুলো ইতিবাচক দিক রয়েছে। বাজারে টাটকা আনাজের জোগান বাড়ে। দাম কমে। বিক্রি বেড়ে যায় শীতের পোশাকের দোকানে। শীত পড়লে নলেন গুড়ের স্বাদ বাড়ে। গুড়ের রসগোল্লা, সন্দেস উন্নত হয়। শীত বাড়ায় ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের বাহক মশাদের বংশবিস্তারে ছেদ পড়বে বলে স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন অনেকে।
শীতের প্রকোপের সঙ্গে একটা ভয়ও লুকিয়ে আছে। সেটা হল, করোনার প্রকোপ আরও বাড়বে না তো। আরও একটা ভয় হল, শীতের হাত ধরেই হাল্কা সর্দি, কাশি শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যে লক্ষণগুলোর সঙ্গে করোনাভাইরাসের লক্ষণের যথেষ্ট মিল রয়েছে। সেটাই ভাবাচ্ছে জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘শীতে কোভিডের লক্ষণকে সামান্য সর্দিকাশির লক্ষণ বলে ভুল করলে সেটা মারাত্মক হতে পারে। তাই ঠান্ডা উপভোগ করলেও কোভিড নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।’’