প্রতীকী ছবি
ক্লাস চলাকালীন বয়ঃসন্ধির এক কিশোরীর ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল। স্কুলে কোনও শিক্ষিকা নেই। জড়তায় দীর্ঘক্ষণ সমস্যার কথা চেপে রেখেছিল সে। শেষে মাস্টারমশাইরা বুঝতে পেরে তাকে এনে দেন ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’। এই ঘটনার পরেই, পুরুলিয়ার মানবাজারের কিছু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলে গড়ে তুলেছেন ‘স্মাইল’ নামে একটি ক্লাব। জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল পথ চলা। করোনা-পরিস্থিতিতেও তাঁরা ছাত্রীদের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন ‘ন্যাপকিন’।
ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, জুন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজার ‘ন্যাপকিন’ দেওয়া হয়েছে। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে আরও ২,২০০টি। ক্লাবের সদস্য তথা মানবাজার ২ ব্লকের কৃষ্ণপুর জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক সৈকত সেন জানান, তাঁদের কাজের পরিধি দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ২৬০ জন।
ক্লাব-কর্তাদের দাবি, এখনও পর্যন্ত পরিষেবা নিয়ে ১০৩টি গ্রামে পৌঁছনো গিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন কলেজ পড়ুয়া, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকেরা। সৈকতবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ফেসবুক পেজ রয়েছে। তা দেখে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে যোগাযোগ করছেন।’’
বান্দোয়ানের কুচিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সিং বলেন, ‘‘যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা দেন।’’
মানবাজারের কুমারী হাইস্কুলের শিক্ষিকা রীনা সিং এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মী শতাব্দী মুখোপাধ্যায় জানান, করোনা-পরিস্থিতিতে অনেকে ঋতুর দিনগুলিতে পুরনো কাপড় কেটে ব্যবহার শুরু করেছিল। তাঁরা বোঝানোর পরে, দরকারে ফোন করছে কিশোরীরা। ক্লাবের স্থানীয় সদস্যের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ‘ন্যাপকিন’। মানবাজার ২ ব্লকের গোয়ালাপাড়া গ্রামের কিশোরী ঝর্না হেমব্রম ও সঞ্চিতা কর্মকার জানায়, তাদের গ্রাম থেকে দোকান অনেকটাই দূরে। ক্লাব থেকে নিয়মিত ‘ন্যাপকিন’-এর জোগান মেলায় সুবিধা হয়েছে।
গোয়ালাপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বাজারচলতি ভাল ‘ন্যাপকিন’-এর দাম পড়ে ২৮ টাকা। পাইকারি দরে তাঁরা ১৭-১৮ টাকায় পেয়ে যান। প্রথম বার বিনামূল্যেই ছাত্রীদের ‘ন্যাপকিন’দেওয়া হয়। তার পরে প্যাকেটপিছু নেওয়া হয় দশ টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘বিনামূল্যে মেলা জিনিসের অনেক সময়ে কদর থাকে না। তাই এই ব্যবস্থা। তবে অনেক গ্রামে মেয়েরা দশ টাকাও জোগাড় করতে পারে না। তাদের বিনামূল্যেই দেওয়া হয়।’’
বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই উদ্যোগ খুব ভাল। লকডাউনে বয়ঃসন্ধির কিশোরীদের ঋতুকালীন সংক্রমণের থেকে রক্ষা করার বড় দায়িত্ব তাঁরা নিয়েছেন।’’