বরাবাজারের এক খাদানে পুলিশ-প্রশাসনের কর্মী-আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি পাথর খাদান চলার অভিযোগ ওঠার পরে অভিযানের দাবি উঠছিল। রবিবার বরাবাজারের নানা পাথর খাদানে অভিযান চালাল জেলা প্রশাসনের টাস্ক ফোর্স। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেশ কয়েকটি গ্রামে খাদানে অভিযান চালানো হয়। অবৈধ খাদানে যাওয়ার রাস্তা খুঁড়ে দেওয়া, কয়েকটি জায়গায় বোর্ড বসানো হয়। তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। বেআইনি ভাবে চলা খাদানের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
এ দিন জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর যৌথ ভাবে অভিযান চালায়। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘বেআইনি খাদান নিয়ে অভিযোগ মিলছিল। সেই অনুযায়ী টাস্ক ফোর্স অভিযান চালিয়েছে। এফআইআর করা হচ্ছে। অভিযান চলবে।’’ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘১১টি রাস্তা কাটা হয়েছে। সেগুলি দিয়ে একাধিক খাদানে যাতায়াত করা যেত। বোর্ডও বসানো হয়েছে।’’
অবৈধ খাদান চালানোর অভিযোগে সপ্তাহখানেক আগে পুলিশ লটপদা পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্য ও তাঁর ভাইকে গ্রেফতার করে। পাথর খাদান চলা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি তরজা বাধে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার পরে জেলাশাসকের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়, অবৈধ খাদান বন্ধে আচমকা অভিযান চালানো হবে। এ দিন সকালে অভিযান শুরু হয়। দু’টি মাটি কাটার যন্ত্র রাখা হয়েছিল। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গহমিকোচা, ধারগ্রাম, পুইজাঙ্গা গ্রামের খাদানে অভিযান চলে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় ৭০-৭৫টি ছোট-বড় খাদানের হদিস মেলে। তবে সেগুলিতে কাউকে পাওয়া যায়নি। জিপিএস পদ্ধতিতে খাদানের অবস্থান দেখা হয়। আধিকারিকেরা জানান, খাদানের জায়গাগুলি কোনওটি খাস জমি, কোনওটি বন দফতরের জায়গা, আবার কোনওটি ব্যক্তি মালিকানার জায়গা বলে দেখা গিয়েছে। মানবাজারের মহকুমাশাসক শুভজিৎ বসু বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে খাদানে আসার রাস্তাতেও গভীর ভাবে গর্ত করে দেওয়া হয়েছে।’’
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক দিন আগে বেআইনি পাথর খাদান বন্ধে প্রশাসন সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। এ দিন অভিযানের পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রশাসনের এমন ভূমিকাই দেখতে চাই। তবে আরও আগে অভিযান হলে খুশি হতাম। রাজস্ব ফাঁকি পড়ে, এমন কিছু হতে দেওয়া চলবে না। কড়া পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।’’
অভিযানে থাকা এক আধিকারিকের দাবি, খাদানগুলি জঙ্গলে ঘেরা এলাকার মধ্যে থাকায় সাধারণ বাসিন্দারা এ দিকের পথ মাড়ান না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সে সুযোগে খাদান চালায়। তবে এ দিনের অভিযানের খবর কোনও ভাবে খাদান ব্যবসায়ীরা আগে জেনে গিয়েছিল বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, সাধারণত খাদানগুলিতে নানা যন্ত্রপাতি পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু দু’-এক দিন আগে থেকে যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে, দাবি স্থানীয় কয়েক জনের। পুলিশ সূত্রের দাবি, সপ্তাহখানেক আগে দু’জনকে গ্রেফতার করায় সম্ভবত বাকিরা সতর্ক হয়ে গিয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই আচমকা অভিযান চালানো হবে বলে জানান প্রশাসনের কর্তারা।