Suvendu Adhikari Statement

কয়লায় ভাগ: হিসাব নিয়ে শুভেন্দু-দাবি

জেলার ছ’টি বিধানসভা পেলেও বান্দোয়ান ও মানবাজার কেন্দ্র দখল করতে না পারায় দুঃখের কথা এ দিনও শুভেন্দু সভায় জানিয়েছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৪
Share:

ঝালদা হাটতলা ময়দানে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সুজিত মাহাতো Stock Photographer

কয়লা মাফিয়া বলে অভিযুক্ত লালার ডায়েরিতে প্রতি মাসে পুরুলিয়ার তিন তৃণমূল নেতার নামে লক্ষ লক্ষ টাকার উল্লেখ করা রয়েছে বলে ভরা সভায় অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। গত ক’দিন ধরে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তোপ দেগে আসছিলেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ঝালদার হাটতলা ময়দানের সভা থেকে সুজয়ের বিরুদ্ধেও পারলে তাঁর আগামী দিনের সভা আটকানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন শুভেন্দু।

Advertisement

এত দিন লালার ডায়েরিতে ওই তিন তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ করে এসেছেন শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে তাঁদের মধ্যে সুজয়কে ইতিপূর্বে ইডি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে ডেকেছিল। যদিও অভিযোগ যে সত্য নয়, তা ইডিকে তথ্য-সহ জানিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেছিলেন সুজয়। তবে এ দিন আরও একধাপ এগোন শুভেন্দু।

শুভেন্দু বলেন, ‘‘লালার ডায়েরির ৩৯৭ নম্বর পাতায় লেখা সুশান্ত মাহাতো প্রতি মাসে দু’লক্ষ টাকা, ৩৮৪ নম্বর পাতায় লেখা প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো প্রতি মাসে ১০ লক্ষ টাকা, ৩৭৬ নম্বর পাতায় লেখা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি মাসে ছ’লক্ষ টাকা।” সেই সঙ্গেই তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘সাহস থাকলে আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে দেখান।”

Advertisement

তবে অভিযোগ গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। সুজয়ের কটাক্ষ, ‘‘লালার ডায়েরি তাহলে এখন শুভেন্দুর কাছেই আছে! লালাই এখন শুভেন্দুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। এটাই স্পষ্ট হচ্ছে। ডায়েরিটা উনি নিয়ে আসুন। এক সাথেই আদালতে যাই।”

শান্তিরাম মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন।এ কথার কী জবাব দেব?’’ চেষ্টা করেও বিধায়ক সুশান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোন ধরেননি, উত্তর দেননি মেসেজের।

জেলার ছ’টি বিধানসভা পেলেও বান্দোয়ান ও মানবাজার কেন্দ্র দখল করতে না পারায় দুঃখের কথা এ দিনও শুভেন্দু সভায় জানিয়েছেন। সেই সঙ্গেই তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বান্দোয়ানের রাজীবলোচন সরেন (তৃণমূল বিধায়ক) চাকরি দেওয়ার নাম করে কত টাকা মেরেছেন। মন্ত্রী সন্ধ্যারাণী টুডু (মানবাজারের তৃণমূল বিধায়ক) চাকরি দিয়েছেন শুধু নিজের আত্মীয়দের।” অভিযোগ উড়িয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

বিরোধী দলনেতা নিশানা করেছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। নাম করেই অভিযোগ করেন, ‘‘উত্তর চব্বিশ পরগণায় থাকাকালীন তিনি গরু পাচারে যুক্ত ছিলেন।’’ তবে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেননি পুলিশ সুপার। তবে এই সমস্ত অভিযোগ মঞ্চ গরম করার, যার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই বলে দাবি করছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া।

রাজ্যের তৃণমূলের দুর্নীতির জন্যই কেন্দ্রের জনমুখী প্রকল্পের সুফল রাজ্যবাসী পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু। দাবি করেন, আবাস যোজনা, জল জীবন মিশন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে বলেই পুরুলিয়ার লোকজন আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন না, জল প্রকল্প তৈরি হচ্ছে না। ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা শুরু করার পরেও কেন পুরুলিয়ার মহিলাদের বাড়ির জ্বালানির জন্য ডালপালা সংগ্রহ করতে হচ্ছে, পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় নতুন, নতুন জল প্রকল্পের কাজ চলছে। গত দশ বছরে পুরুলিয়ায় পানীয় জলের কী উন্নতি হয়েছে জেলাবাসী তা প্রত্যক্ষ করছেন। শুভেন্দুবাবু ও বিজেপির নেতা কর্মীরাই শুধু সেটা দেখতে পাচ্ছেন না।”

বিজেপি ও তৃণমূলের সভা ও পাল্টা সভা নিয়ে গত মাস থেকেই রাজনৈতিক মহল সরগরম। গতমাসে জয়পুরে সভা করেন শুভেন্দু। শুক্রবার সেখানেই সভা করে তৃণমূল। সভায় তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত হুঙ্কার দিয়ে জানিয়েছিলেন, চাইলে তাঁরা বিজেপির সভা তছনছ করে দিতে পারেন। তবে তাঁরা সেটা করতে চান না। এ দিন ঝালদার সভায় শুভেন্দু পাল্টা বলেন, ‘‘২৫ জানুয়ারি পাড়ায়, ফেব্রুয়ারি মাসে মানবাজারে সভা করতে আসব। পারলে আমাকে আটকে দেখান।”

সুজয় অবশ্য বলেন, ‘‘উনি সভা করতে জেলায় আসুন না, কে বাধা দিচ্ছে।কিন্তু উনি সভা করতে এসে একের পর এক মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement