কাজ শুরুর আগে পুজো। বৃহস্পতিবার। ছবি: পাপাই বাগদি
কয়লা খনি গড়ার আগে দরকার বিশদ সমীক্ষা। মহম্মদবাজারে প্রস্তাবিত ডেউচা-পাঁচামি দেওয়ানগঞ্জ হরিণশিঙা কোল ব্লকে কোথায়, কত কয়লা কী অবস্থায় আছে, মাটির কত নীচে আছে তার খুঁটিনাটি তথ্যভিত্তিক সমীক্ষার কাজ শুরু হল বৃহস্পতিবার।
এ দিন সকালে খনি গড়ায় নোডাল এজেন্সি পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করল সেন্ট্রাল মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন ইনস্টিটিউট লিমিটেড (সিএমপিডিআইএল)। হরিণশিঙা লাগোয়া কেন্দ্রপাহাড়ি গ্রাম থেকেই শুরু হল সে কাজ। রীতিমতো পুজো করে কাজে হাত পড়ল। প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক বিষয় হল, এলাকাবাসীর তরফে এ কাজে বাধাদানের কোনও চেষ্টা হয়নি। বরং সহযোগিতাই করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কথায়, এলাকায় মেশিন ঢোকানোর আগে মানুষের আস্থা অর্জন জরুরি ছিল। তাড়াহুড়ো না-করে সেই প্রয়াসই চালিয়েছে প্রশাসন। ক্ষতিপূরণের চেক পাট্টা দেওয়ার পর প্রস্তাবিত এলাকার ২৬০ জনকে জুনিয়র কনস্টেবল পদে নিয়োগ পত্র দেওয়ার পর ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি হতেই সমীক্ষার কাজে হাত দিল প্রশাসন। যদিও বুধবার ওই গ্রামেই একটি সাবমার্সিবল পাম্প লাগাতে গিয়ে খনি-বিরোধী মহাসভার বাধার মুখে পড়তে হয় প্রশাসনকে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রপাহাড়ি গ্রামে বসবাস কমবেশি ২১৫টি পরিবারের। অধিকাংশ পরিবারই খনির জন্য জমি দিতে সম্মতি জানিয়েছে। বেশ কিছু জন তাঁদের জমি সরকারকে রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছেন। জুনিয়র কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন গ্রামের বেশ কয়েক জন। ফলে খনির প্রতি ইতিবাচক মনোভাবই দেখিয়েছেন স্থানীয়েরা। গ্রামের বাসিন্দা মন্দিরা লোহার, বিশ্বজিৎ মুর্মু, রবিলাল মুর্মুরা, আপেল শেখরা বলেন, “আমরা চাই এখানে শিল্প হোক। চাই, আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা চাকরি পাক। তাই সমীক্ষার কাজে সহযোগিতা করছি। তবে, সরকার প্রতিষ্রুতি রক্ষা করুক, এটাও চাইব।’’
স্থানীয় মানুষের সমর্থন থাকলেও ঝুঁকি নেয় প্রশাসন। ট্রাকের উপরে বসানো ওই যন্ত্র এলাকায় ঢোকানোর আগে এলাকা নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। লাগানো হয়েছে নজর ক্যামেরাও।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার করা প্রাথমিক সমীক্ষা বলছে, মহম্মদবাজার ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের যে ১০টি মৌজায় মাটির নীচে সঞ্চিত ২১০ কোটি টন কয়লা মজুত আছে। কিন্তু কোথায় কী ভাবে কয়লা রয়েছে, সেটা জানতে সমীক্ষা আবশ্যিক। সেই সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই ঠিক হবে, কয়লা তোলার পদ্ধতি কী হবে (মাইনিং প্ল্যান)। সেটা খোলামুখ না অন্য কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আদৌ কয়লা উত্তোলন লাভজনক কি না, এমন নানা প্রশ্নেরও উত্তর মিলবে।
পিডিসিএল সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত খনি এলাকায় মোট ৭৯টি জায়গায় ড্রিল বা রোর হোল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত যে অংশে প্রথম ধাপের কাজ শুরু হবে, সেই দেওয়ানগঞ্জ-হরিণশিঙা কোল ব্লকে ১৬টি বোর হোল হবে। কেন্দ্রপাহাড়ি গ্রামে বৃহস্পতিবার প্রথম বোরহোল খননের কাজ শুরু বয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রতিটি বোর হোল হবে ২০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে। প্রয়োজন অনুযায়ী গভীরতা হবে ৩০০ মিটার বা তারও বেশি।