Taldangra BY-Poll

বন্ধ আবাস-সমীক্ষা, ক্ষোভ কাজে লাগাতে আসরে সব দল

গত কয়েক বছরে দেওয়াল ভেঙে জেলায় বেশ কয়েক জনের বেঘোরে মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃতদের পরিবারের নাম আবাস তালিকায় ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৪
Share:

আবাস যোজনার বাড়ি। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের মতোই তালড্যাংরা বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারেও আবাস প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা আটকে রাখার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। দাবি করা হচ্ছে, কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী না থেকে রাজ্যই আবাস প্রকল্পে দুঃস্থদের বাড়ি তৈরি করে দেবে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে বলেই কেন্দ্র টাকা আটকেছে, এমনই অভিযোগ প্রচারে তুলে ধরছে বিজেপি।

Advertisement

তবে এই দায় ঠেলাঠেলিতে সন্তুষ্ট নন দুঃস্থেরা। তাঁদের দাবি, বর্তমানে রাজ্যের অন্যত্র আবাস সমীক্ষার কাজ চললেও উপনির্বাচনের জন্য আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ায় বাঁকুড়ায় তা আটকে গিয়েছে। ফলে, রাজ্যের আবাস প্রকল্পের ঘর পেতেও দেরি হবে।

গত কয়েক বছরে দেওয়াল ভেঙে জেলায় বেশ কয়েক জনের বেঘোরে মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃতদের পরিবারের নাম আবাস তালিকায় ছিল। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য দায় ঠেলাঠেলিতে বাড়ি পাননি। প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়া জেলায় কাঁচাবাড়িতে বসবাসকারী প্রায় এক লক্ষ পরিবার রাজ্যের আবাস প্রকল্পে আসতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় তাঁরা আশাবাদী হলেও উপনির্বাচনের জন্য তা পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

Advertisement

তালড্যাংরা বিধানসভার মধ্যে রয়েছে ইঁদপুরের বাউরিশোল ওই গ্রামের বাসিন্দা মেথর মাজির ভোট নিয়ে মাথাব্যথা নেই। সদ্য ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-য় তাঁর কাঁচাবাড়ি আরও নড়বেড়ে হয়েছে। পঞ্চায়েতের দেওয়া ত্রিপলে চালা ঢেকেও বৃষ্টির জল আটকানো যাচ্ছে না। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওই ঘরে ভয়ে ভয়ে থাকছেন মেথর। তাঁর স্ত্রী সুষমা বলেন, “ভোটের কথা ভাবছি না। ঘর নিয়ে বড় চিন্তায় রয়েছি। আবাসে নাম লেখানো আছে। কিন্তু কবে আর বাড়ি পাব?’’ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত খড়ের চালা কোনও রকমে নিজেই মেরামত করেছেন গ্রামেরই শ্রীকান্ত মাজি। তিনিও সরকারি বাড়ি পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

ওই বিধানসভার মধ্যে পড়ে তালড্যাংরার মেদিনা গ্রাম। স্থানীয় যুবক শিবরাম দুলে খড়ের চালার মাটির বাড়িতে বাবা, মাকে নিয়ে থাকেন। ঝড়বৃষ্টিতে তাঁর বাড়িরও ক্ষতি হয়েছে। শিবরামের কথায়, ‘‘অনেক বছর আগেই আমাদের সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি পাওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানিতে পাচ্ছি না। এ বার রাজ্য সরকার বাড়ি দিতে চাইছে। অথচ ভোটের জন্যআমাদের এলাকায় সমীক্ষা বন্ধ। ভোট কি পরে হলে হত না?’’ তালড্যাংরার বিবড়দা গ্রামের নকুল কালিন্দীর আক্ষেপ, ‘‘একের পর এক ভোট। মানুষের কাজ কবে হবে?”

বিষয়টি বিরোধীরাও প্রচারে সামনে আনছে। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “একজন বিধায়ককে তৃণমূল লোকসভায় প্রার্থী না করলে উপনির্বাচনটাই হত না। বিজেপি ও তৃণমূল নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়েই গরিব মানুষকে সরকারি প্রকল্পে বঞ্চিত করছে।’’ বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের দাবি, “কেন্দ্রের আবাস প্রকল্পে রাজ্য সরকার দুর্নীতি না করলে রাজ্যের সব গরিব মানুষ এতদিনে পাকা বাড়ি পেয়ে যেতেন। নির্বাচনী প্রচারে আমরা মানুষকে তা বলছি।”

তবে বাঁকুড়ার সাংসদ তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী জানান, নির্বাচন ঘোষণা হলেও আবাস সমীক্ষার কাজ যাতে না বন্ধ হয় সে জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়েছিল। রাজ্যের প্রকল্প থেকে একটিও যোগ্য পরিবার বঞ্চিত হবে না আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এ রাজ্যে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে মানুষকে বঞ্চিত করছে। আর সিপিএমের কথার জবাব দেওয়ার দরকার নেই। ওরা অস্তিত্বহীন, বিজেপির সহযোগী।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement