তদন্তে: ঘটনাস্থলে মহকুমাশাসক। িনজস্ব চিত্র
অবৈধ দখলদারির অভিযোগ নতুন নয়। তবে এ বার খোদ সরকারি জায়গা দখল করে সেখানেই সরকারি আবাসন প্রকল্পে বাড়ি বানানোর অভিযোগ উঠল সিউড়িতে। এমন অভিযোগকে ঘিরেই মঙ্গলবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল জেলা সদরে। তবে ঘটনার জন্য শুধু অবৈধ দখলদারদের দায়ী করাই নয়, একই ভাবে অভিযোগের আঙুল উঠেছে সিউড়ি পুরসভার দিকেও।
অভিযোগ, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের করণ চত্বরে অবৈধ ভাবে বসবাস করা অন্তত ১৮টি পরিবারকে ‘হাউস ফর অল’ বা ‘সবার জন্য বাড়ি’ নামক সরকারি আবাসন প্রকল্পে বাড়ি তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে সিউড়ি পুরসভা। কিছু বাড়ির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছু বাড়ি নির্মীয়মাণ। সেই অবস্থায় এ দিন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে কাজ থামানো গিয়েছে। মহকুমা শাসক (সিউড়ি) রাজীব মণ্ডলের নেতৃত্বে মঙ্গলবার অভিযান চালানো হয়।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এসডিএলআরও রবিউল ইসলাম-সহ ভূমি ভূমি সংস্কার দফতরের অন্য আধিকারিক পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। কীভাবে সরকারি জায়গায় বাড়ি করেছেন, দখলদারদের কাছে তার জবাবদিহি তলব করার পাশাপাশি সেখান থেকেই ফোন করে পুরপ্রধানকে মৃদু ভর্ৎসনা করেন মহকুমাশাসক।
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশেই অভিযান চালানো হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের করণের জায়গা দখল করে বসবাস করছিল কিছু পরিবার। আশ্চর্ষের বিষয়, তাদের মধ্যে বেশ কিছু পরিবারকে পুরসভা সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। পুরসভাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, স্বাস্থ্য দফতরের দফতরের বেশ কিছু আবাসনও অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। সবটা জানার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার অধিকারিক রবিউল ইসলাম বলছেন, ‘‘ওই দফতরের কতটা জায়গা দখল হয়ে আছে সেটা চিহ্নিত করে রিপোর্ট তৈরি করে শীঘ্রই মহকুমাশাসককে জমা দেব।’’
প্রশাসন ও বীরভূম স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে খবর, প্রশাসন ভবনের অদূরে পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাতোড় মৌজায় প্রায় ৫ একর জমির উপরে রয়েছে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের করণ। বিস্তৃত্ব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দফতরের বিভিন্ন ভবন আছে রয়েছে আবাসনও। জেলা সংশোধনাগারের পিছনদিকের রাস্তা ধরে সিএমওএইচ অফিসে আসার রাস্তায় স্বাস্থ্য দফতরের জমি দখল করে সেখানে অস্থায়ী কাঠামো গড়ে বেশ কিছু পরিবার বসবাস করছে দীর্ঘদিন। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নয় এলাকাটি। সেখানেই হঠাৎ কংক্রিটের বাড়ি উঠতে দেখে সন্দেহ হয় স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের। সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘দফতরের জায়গা পাকাপাকি ভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে এমন সন্দেহ হতেই কিছুদিন আগে বিষয়টি জেলাশাসককে জানাই। তারপরই মঙ্গলবার অভিযান চলে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, পুর এলাকায় বসবাসকারী যে সব পরিবারের পাকা বাড়ি নেই তাদের জন্যই ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। কেন্দ্র দেয় দেড় লক্ষ, রাজ্য দেয় এক লক্ষ ৯৩ হাজার, বাকি ২৫ হাজার টাকা ওই প্রকল্পের উপভোক্তাকে দিতে হয়। সরকারি জায়গা দখল করে থাকা দখলদারদের সরকারি প্রকল্পের বাড়ি করার অনুমোদন পুরসভা কী ভাবে দিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি নিজের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে এর দায় চাপিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের কাঁধে। পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে পুরসভা কিছুই জানতো না। প্রাক্তন পুরপ্রধান ওই পরিবারগুলিকে ভুল বুঝিয়ে আবেদন করা করিয়েছেন।’’ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মাত্র ৫ বছর ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমি। দীর্ঘদিন পরিবার গুলি বসবাস করছে। জানতাম না খাস না ব্যক্তিগত জায়গা। বাড়ি ছিল না তাই আবেদন করতে বলেছিলাম। আইনে যা আছে তাই হবে।’’
যে সব দখলদারদের বাড়ি তৈরি ঘিরে আপত্তি তাঁদের একাংশ পাল্টা বলছেন, ‘‘কয়েক দশক ধরেই বিনা বাধায় আমরা বসবাস করছি। পুরসভা পাকাবাড়ির সুযোগ দিলে নেব না কেন?’’ তাঁরা জানান, সে জন্য প্রতিটি পরিবার পুরসভাকে ২৫ হাজার করে জমাও দিয়েছে। তবে এখনও সরকারি টাকা মেলে নি।