purulia

‘পিছন থেকে ছুরি মারলে কী করব’, আক্ষেপ সুরেশের

পুরপ্রধান হিসেবে সুরেশের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষের অভিযোগে ২০১৮ সালে উপপুরপ্রধান-সহ দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশ বিরোধীদের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২ ০৮:০০
Share:

মমতার বৈঠকে সুরেশ। ফাইল চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরাট ‘মধ্যপ্রদেশ’ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। ৩০ মে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের ১২৫ কেজি ওজন ও ‘পকৌড়ি’-সহ নানা ভাজাভুজির খাদ্যাভ্যাস শুনে তাঁকে স্বাস্থ্য নিয়ে সতর্ক করেন মমতা। কিন্তু তার মাস কয়েকের মধ্যে ওজন ঝরানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরপ্রধানের কুর্সি হারানোর পরিস্থিতিও যে তৈরি হবে, তা আঁচ করেননি সুরেশ। দলের একাংশের অভিযোগ, তাঁর একনায়ক-সুলভ মনোভাবের খেসারত দিতে হল তৃণমূলকে। অভিযোগ উড়িয়ে সুরেশের দাবি, এর পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে।

Advertisement

পুরপ্রধান হিসেবে সুরেশের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষের অভিযোগে ২০১৮ সালে উপপুরপ্রধান-সহ দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশ বিরোধীদের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। সে বার অনেক জলঘোলার পরে বন্ধ পুরভবনের বারান্দায় বিক্ষুব্ধরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়ে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সভার ভিত্তিতে মতামত জানাতে প্রশাসন টালবাহানা করলে বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে সুরেশ সরেন।

এ বার বোর্ড গঠনের ছ’মাস পরে ১৩ অক্টোবর সেই পুরপ্রধান সুরেশের বিরুদ্ধে ফের অনাস্থা প্রস্তাব এল। আনলেন কংগ্রেসের পাঁচ কাউন্সিলর ও এক নির্দল কাউন্সিলর। পরে তৃণমূল ত্যাগ করে নির্দল হিসেবে জেতা এক কাউন্সিলরও বিক্ষুব্ধদের সঙ্গী হন। বিক্ষুদ্ধরাও তাঁর বিরুদ্ধে সেই একনায়ক-সুলভ আচরণের অভিযোগ তোলেন। মুখ খোলেন সুরেশের এক সময়ের সহকর্মী জেলা তৃণমূল নেতা প্রদীপ কর্মকারও।

Advertisement

সূত্রের দাবি, তৃণমূলের একাংশ সুরেশকে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ করে অনাস্থা রোখা যায় কি না ভাবেন। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব আপাতত সুরেশেই আস্থা রাখেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকদলের তরফে দুই নির্দল কাউন্সিলরকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলে। যদিও কংগ্রেসের অভিযোগ, বোঝানো নয়, বিক্ষুব্ধদের অনাস্থার পথ থেকে সরানোর জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নানা ভাবে চাপ দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। পাশাপাশি একের পর এক মামলা করে বিক্ষুব্ধদের ব্যতিব্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে প্রভাবিত করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত এ দিন তলবিসভায় কাউন্সিলরদের না পাঠানোর ব্যাপারে দলীয় ভাবে হুইপ জারি করা হয়।

যদিও সুরেশের দাবি, তিনি একক ভাবে পুরসভার কাজ পরিচালনা করেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, এ দিন আড়ালে থেকেই পুরভবনের ভিতরে কী ঘটছে, সে দিকে নজর রাখার চেষ্টা চালান সুরেশ। উদ্বেগ কাটাতে দুপুরে এক দফা ঘুমিয়েছেন। পরে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘দলেরই একাংশ অন্তর্ঘাত করেছে। কেউ যদি সঙ্গে থেকেও অন্তর্ঘাত করে, তাহলে কী করতে পারি? ঘোষিত শত্রুর থেকে সঙ্গে থেকে কেউ যদি পিছন থেকে ছুরি মারে, কী করব? এর থেকে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে?’’ তাঁর দাবি, তৃণমূলেরই কোনও কোনও নেতাকে হাই কোর্ট চত্বরে বিরোধীদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। সুরেশের কথায়, ‘‘দলকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি। কিছু প্রমাণও তুলে দিয়েছি। আশাকরি দল এ বার ব্যবস্থা নেবে।’’

অনেকেই বলছেন আপনার জন্যই দলকে একটি পুরসভা হারিয়ে খেসারত দিতে হল? সুরেশের জবাব, ‘‘দল-বিরোধী কাজ কে করেছে, তা দলীয় নেতৃত্ব জানেন। অতীতে দল-বিরোধী কাজকর্মের জন্য কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্যই আজ দলের একজন পুরপ্রধানকে অপসারিত হতে হল। সুরেশ আগরওয়াল অপসারিত হল কি, হল না, সেটা বিষয় নয়, আসলে দলকে ক্ষমতা হারাতে হল।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‘কেন এমন হল, তা নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement