— প্রতীকী চিত্র।
সহকর্মীদের কারও কারও মনখারাপ। তবে চাকরির শেষ দিন দেবেন্দ্র সন্দল বেশ হাশিখুশি মেজাজেই ছিলেন। মনে মনে হয়তো ভাবছিলেন, যাক, এ বার অসুস্থ স্ত্রীকে একটু সময় দেওয়া যাবে। কিন্তু সে আর হল কই! স্বামীর ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের মাঝখানেই মৃত্যু হল স্ত্রীর। ঘটনাস্থল রাজস্থানের কোটা।
কোটার একটি সংস্থায় ম্যানেজার পোস্টে চাকরি করতেন দেবেন্দ্র। স্ত্রী টিনা সন্দল বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। সম্প্রতি অসুস্থতা আরও বেড়েছিল। হৃদ্রোগের সমস্যায় ভুগছিলেন মহিলা। তাঁর দেখভাল করবেন বলেই চাকরির তিন বছর বাকি থাকতেই স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছিলেন প্রৌঢ়। মঙ্গলবার ছিল তাঁর কাজের শেষ দিন। সহকর্মীরা দেবেন্দ্রর জন্য বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন টিনাও।
অনুষ্ঠান শুরু হয়। সহকর্মীদের জোরাজুরিতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই গলায় ফুলের মালা পরেন। সকলের সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তোলেন। স্বামীর চাকরির শেষ দিনে তাঁর সহকর্মীরা পুরনো কথাবার্তা বলছিলেন। সে সব শুনতে শুনতে চেয়ারে বসে হাততালি দিচ্ছিলেন টিনা। আচমকা ছন্দপতন।
হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় স্বামীকে ইশারা করে কাছে ডাকেন টিনা। দেবেন্দ্র কাছে যেতেই তিনি বলেন, ‘মাথাটা ঘুরছে।’ শশব্যস্ত হয়ে স্বামী তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। চিৎকার করে সহকর্মীদের কাছে জল চান। ‘কী হল, কী হল’ বলে দম্পতির কাছে ছুটে যান সকলে। এক সহকর্মী জানান, টিনা যাতে ভয় না-পান, তাঁর মন অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। এক সহকর্মী ক্যামেরা নিয়ে এসেছিলেন। তিনি টিনাকে হাসতে অনুরোধ করেন। স্বামী-স্ত্রীর ছবি তোলার সময় টিনা হাসেনও। তার পরেই সামনের টেবিলে মাথা ঠুকে পড়ে যান তিনি। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহিলা।
দেবেন্দ্রর আর এক সহকর্মী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্ত্রীকে ওঠানোর চেষ্টা করেন স্বামী। কিন্তু টলমল করতে করতে পড়ে গিয়েছিলেন। তড়িঘড়ি এক চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়েছিল। তিনি মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই সহকর্মী বলেন, ‘‘দম্পতি কোটার শাস্ত্রীনগরের বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ধরে স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন বলে স্বামী স্বেচ্ছাবসরের আর্জি জানিয়েছিলেন। যে দিন অবসরের দিন এল, সে দিনই অঘটন। স্ত্রীর দেখভালের সুযোগই পেলেন না মানুষটা!’’
চাকরির তিন বছর বাকি ছিল দেবেন্দ্রর। স্ত্রীর জন্যই অবসর নিয়েছিলেন। সজল চোখে সদ্য বিপত্নীক প্রৌঢ় বললেন, ‘‘ফাঁকি দিয়ে চলে গেল ও।’’