চিহ্ন: হাসপাতালের পাশের পুকুরের জলে রক্তমাখা ব্যান্ডেজ পড়ে রয়েছে। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের ঠিক পাশেই পুকুর। অভিযোগ, সেই পুকুরেই ফেলা হচ্ছে হাসপাতালের বর্জ্য। সকাল না হতেই মলমূত্র ত্যাগ করা হচ্ছে পুকুরের পাড়ে। এই সবের জেরে দূষিত হয়ে উঠছে গ্রামের মানুষের ব্যবহারের পুকুর। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গ্রামের মানুষ। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ তুলে মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন রঘুনাথপুরের শালকা গ্রামের মহিলারা।
রঘুনাথপুর শহরের প্রান্তেই তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। ঠিক তার পাশেই রয়েছে বড়মাপের পুকুর শালকা বাঁধ। সেই পুকুরের জল দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন শালকা গ্রামের বাসিন্দারা। সম্প্রতি সেই গ্রামেরই মহিলারা এসেছিলেন এসডিওর কাছে। তাঁদের দাবি, অতীতে এই ধরনের সমস্যা ছিল না। কিন্তু কয়েক মাস যাবৎ ওই পুকুরের জল ব্যবহার করলে চর্মরোগের শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। ভাগ্য বাউরি বলেন, ‘‘পুকুরের জলে স্নান করার পরেই প্রথমে ফুসকুড়ি হচ্ছে সারা গায়ে। তার পরে শুরু হচ্ছে জ্বলুনি।” তাঁদের দাবি, গ্রামের শিশুরাও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ওই মহিলাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই ভোরের দিকে হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা এসে পুকুরের মধ্যেই ফেলে দিচ্ছেন রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, গজ, তুলো। অনেকেই আবার পুকুরের জলেই ধুচ্ছেন রোগীদের জামাকাপড় ও বিছানার চাদর। বাসন্তীদেবীর কথায়, ‘‘আমরা বারণ করলেও ওঁরা শুনছেন না।” এ দিন শালকা গ্রামের পুকুরটিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে হাসপলাতালের পিছন দিকেই পুকুরের একপাশে পড়ে আছে হাসপাতালের বর্জ্য।
অন্য দিকে, এই পুকুরে মাছ ধরে সংসার প্রতিপালন করেন শালকা গ্রামেরই জনা পঞ্চাশ মৎস্যজীবী। তাঁদের দাবি, সম্প্রতি পুকুরের মাছ মরে গিয়ে জলের উপরে ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কালীপদ মেটে, লফর মেটেরা বলেন, “পুকুরে যেমন রোগীদের বর্জ্য সামগ্রী ফেলা হচ্ছে তেমনই হাসপাতালের জল একটি নালা দিয়ে পুকুরে এসে পড়েছে।” পুকুরের জল দূষিত হচ্ছে। আর সেই কারমেই মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
তবে হাসপাতালের বর্জ্য জল কোনওভাবেই পুকুরে মিশতে পারেনা বলে জানাচ্ছেন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার সোমনাথ দাস। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের বর্জ্য জল হাসপাতালের মধ্যেই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধন করে দেওয়া হয়। সেই জল বাইরে যাবে কী ভাবে।” তবে রোগীদের একাংশ রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, তুলো বা স্যানিটারি ন্যাপকিন বাইরে পুকুর পাড়ে ফেলতে পারে বলে জানাচ্ছেন সোমনাথবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রোগীদের এই বিষয়ে বরাবর সচেতন করি। কিন্তু রোগীদের একাংশ যথেষ্ট সচেতন নয়।”