বাঁকুড়া পুরসভায় তাদের পরিচালিত বোর্ড হলেও গত পুরনির্বাচনে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তৃণমূল। ফাইল চিত্র।
শহরের মানুষের মন বুঝতে এ বার গ্রামাঞ্চলের ‘পিছনের সারি’-তে থাকা দলীয় কর্মীদের উপরেই ভরসা রাখছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার জেলায় এসে এ নিয়ে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের ৩০ জন তৃণমূল কর্মীর নামের তালিকা তৈরি করতে বলেছেন জেলা নেতৃত্বকে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সেই কর্মীদের কাজে লাগিয়েই শহরের মন বোঝার চেষ্টা করবে দল।
বর্তমানে বাঁকুড়া পুরসভায় তাদের পরিচালিত বোর্ড হলেও গত পুরনির্বাচনে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তৃণমূল। সে বার শহরের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে জিতেছিল তারা। পরে নির্দলদের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করে। সদ্য শেষ হওয়ায় লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া শহরে রাজ্যের শাসকদলের ফলাফল আরও খারাপ হয়েছে। লোকসভা ভোটে শহরের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু ১৯ নম্বরে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। বাকি সব ওয়ার্ডেই এগিয়ে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে পুর-নির্বাচনে যাওয়ার আগে শহরের মানুষের মন কোন দিকে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে রাজ্যের শাসকদলের কাছে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রাজগ্রামে পুরসভার গড়া একটি পার্কের উদ্বোধনে এসেছিলেন শুভেন্দু। তিনি জানান, পুজোর পরে বাঁকুড়া পুরসভার তরফে একটি ‘কনভেনশন’-এর আয়োজন করা হবে। সেখানে মানুষের সমস্যা শুনতে তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন। রাতে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন শুভেন্দু। মূল বিষয় ছিল আসন্ন পুরনির্বাচনে বাঁকুড়া শহরের জন্য রণকৌশল ঠিক করা।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে শুভেন্দু ২৪ জনের একটি ‘কোর কমিটি’ গড়ে দেন। ওই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপাকে। আহ্বায়ক বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ‘মেন্টর’ অরূপ চক্রবর্তী। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তকে ‘কো-অর্ডিনেটর’ পদে রাখা হয়েছে। বৈঠকে শুভেন্দু দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন, গ্রামাঞ্চল থেকে পিছনের সারিতে থাকা দলীয় কর্মীদের এনে শহরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিতে হবে।
বাঁকুড়া সংসদীয় জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “শহরের নেতারা ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছেন কি না সেই রিপোর্ট দেবেন পর্যবেক্ষকেরা। এতে পক্ষপাতহীন ভাবে আমাদের কাছে রিপোর্ট উঠে আসবে।” যদিও আড়ালে তৃণমূলের নেতারা জানাচ্ছেন, শহরের মানুষ পরিচিত তৃণমূল নেতাদের কাছে মনের কথা খুলে বলবেন না। তাই গ্রাম থেকে আসা অপরিচিত তৃণমূল কর্মীরা মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিয়ে গল্প করে আরও ভাল ভাবে প্রকৃত তথ্য নিয়ে আসতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষকেরা মূলত আড়ালে থেকেই কাজ করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের জেলা নেতাদের একাংশ।
এ নিয়ে শুভেন্দু অবশ্য সরাসরি কিছু বলতে চাননি। সূত্রের খবর, পুজোর পরে, বাঁকুড়া শহরে রাজনৈতিক কর্মসূচি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন তিনি।