বেলগুমা বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে খোলা আকাশের নীচে চলছে মিড-ডে মিলের খাওয়া-দাওয়া। নিজস্ব চিত্র
কোথাও ছাত্রীদের শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। কোথাও পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল খাচ্ছে জলকাদার উপরে বসে। পাশে চরছে গরু। মিড-ডে মিলে যাতে পেট ভরে ছেলেমেয়েরা ডাল-ভাত খেতে পারে, মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানে সোমবার সেই নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেই মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলায় মিড-ডে মিল কেমন চলছে তা দেখতে বেরিয়েছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। জেলার ২০টি ব্লকের ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতেও পরিদর্শনে যেতে বলা হয় আধিকারিকদের। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, কোথাও মিড-ডে মিলে বড় কোনও গোলমাল ধরা না পড়লেও কয়েকটি স্কুলে যে পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের খেতে হচ্ছে, তা নিয়ে মোটের উপরে সন্তুষ্ট নন প্রশাসনের অনেক আধিকারিক।
প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় এ দিন মিড-ডে মিল চলা মোট ৪,৩৯৫টি স্কুলের মধ্যে প্রশাসনের ২২০টি দল ৪,৩১৫টি স্কুল পরিদর্শন করেছে। দেখা গিয়েছে ৩৫টি স্কুলে মিড-ডে মিল চলছে না। বাকি স্কুলে চলছে। জেলার মোট ১৭ হাজার ৩৬ জন শিক্ষক রয়েছেন স্কুলগুলিতে। তার মধ্যে এ দিন ১৫ হাজার ৪৯৭ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সমস্ত স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা মোট চার লক্ষ ৭১ হাজার ৪৭৯ জন। তার মধ্যে এ দিন উপস্থিত ছিল তিন লক্ষ ৪৩৪ জন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বাকি শিক্ষকেরা এ দিন নিয়ম মেনে ছুটি নিয়েছেন কি না সে ব্যাপারে জেলা শিক্ষা দফতর, প্রধান শিক্ষকদের কাছে খোঁজ নেবে।’’
জেলাশাসক গিয়েছিলেন পুরুলিয়া শহর ও লাগোয়া কয়েকটি স্কুলে। পুরুলিয়া ১ ব্লকের বেলগুমা বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে পৌঁছে তিনি দেখেন, পড়ুয়ারা খোলা মাঠে জলকাদার উপরে বসেই মিড-ডে মিল খাচ্ছে। তাদের পাশ দিয়েই ঘোরাফেরা করছে গরু, বাছুর। খোলা মাঠে বসে কেন খাবার খেতে হয়?
স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, ‘কিচেন শেড’ রয়েছে। সেখানে রান্না হয়। খাওয়ার জন্য কোনও বড় জায়গা নেই। তাই পড়ুয়াদের মাঠে বসেই খেতে হয়। খাওয়ার জায়গা যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে তা দেখভালের জন্য কন্যাশ্রী ক্লাবের ‘বড়দি’-সহ ক্লাবের অন্য সদস্যদের সজাগ থাকতে বলেন জেলাশাসক। স্কুলের তরফে জেলাশাসকের কাছে খাওয়াদাওয়ার জন্য হলঘর তৈরি করে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। জেলাশাসক এই অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দেন।
পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাকদা হাইস্কুলে গিয়ে জেলাশাসক মিড-ডে মিলের রান্নাঘরে খাবারের মান পরীক্ষা করেন। ডালের মান আর একটু ভাল হওয়া দরকার বলে তিনি প্রধান শিক্ষককে জানান। ছাত্রীদের কাছে জানতে চান, তাঁদের শৌচাগারের অবস্থা কেমন। ছাত্রীদের তরফে বড়দি লক্ষ্মী সেন ও অন্য এক ছাত্রী পবিতা পরামাণিক জেলাশাসককে জানায়, তাদের শৌচাগারের অবস্থা ভাল নয়। স্কুলের এক কোণে যে দিকে শৌচাগার রয়েছে, সেখানে যেতে হলে ঝোপঝাড় পার হতে হয়। তা ছাড়া, শৌচাগারটির চার পাশে দেওয়াল থাকলেও উপরে ছাউনি নেই। জেলাশাসক প্রধান শিক্ষককে জানান, যতদিন না ছাত্রীদের শৌচাগার ভাল হচ্ছে, ততদিন যেন তাদের স্কুলের অন্য শৌচাগার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।
ঝালদা ১ ব্লকেও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা বিভিন্ন স্কুলে শুধু মিড-ডে মিল পরিদর্শন করাই নয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে খাবারও খান। বিডিও (ঝালদা ১) রাজকুমার বিশ্বাস ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর নন্দ বান্দুলহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে খাবার খান। তালিকায় ছিল ভাত, ডাল, পাঁচমেশালি সব্জি ও আচার। দুপুরে ইলু-জারগো গ্রাম পঞ্চায়েতের ডিবরিটিকর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সিদ্ধার্থ মাহাতোও পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে মিড-ডে মিল খান।