—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সিউড়ি ও নানুরে পর পর দু’দিনে ১৬টি পথকুকুর ও কুকুরছানার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের ধারণা, বিষক্রিয়ার ফলে কুকুরগুলির মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তেও তেমন ইঙ্গিত। এলাকাবাসীর একাংশেরও অভিযোগ, খাবারে বিষপ্রয়োগ করে মারা হয়েছে কুকুরগুলিকে।
তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনাই নয়, এর আগেও বোলপুর, সিউড়ি ও দুবরাজপুরে পথকুকুর মেরে ফেলা এবং তাদের উপরে একই ধরনের অমানবিক আচরণের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন বারবার এমনটা ঘটছে? কারা এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছেন? এর পিছনে কি কোনও চক্র কাজ? পুলিশ কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রকাশ্যে কিছু ঘটলে বা অভিযোগ সামনে এলে পুলিশ নিশ্চিত ভাবেই ব্যবস্থা নেয়। গ্রেফতার করার নজিরও আছে। তবে পথকুকুরদের উপরে নিষ্ঠুর কাণ্ডের পিছনে কোনও চক্রের যুক্ত থাকার কথা নয়।’’
এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ কুকুর নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলির। তারা প্রশাসনের কাছে সচেতনামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি কীটনাশক বিক্রির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের দাবি জানাচ্ছেন। তবে কুকুর হত্যার পিছনে কোনও চক্রের যুক্ত থাকার সম্ভাবনা তাঁরাও মানছেন না। অনেকেই মনে করছেন, পথকুকুরদের উপরে অত্যাচারের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে কুকুরদের সংখ্যা বৃদ্ধি।
সহমত পোষণ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে পথকুকুরদের নিয়ে কাজ করা কলকাতার বাসিন্দা দীপান্বিতা সরকার। তিনি বছর কয়েক আগে বীরভূমে এসে পথকুকুরদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কুকুর গৃহপালিত প্রাণি হাঁস, মুরগি, গরু ও ছাগলের মতো অর্থনৈতিক লাভ দিতে পারে না। তাচ্ছিল্য, ঘৃণা ও নিষ্ঠুর আক্রমণের শিকার হতে হয় তাদের। তাই পথকুকুরের জন্মহার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। শহরের দিকে এ কাজ হলেও, গ্রামের দিকে হয় না। সমস্যা সেখানেই।’’
পশুপ্রেমী সংগঠনের সঙ্গে যুক্তেরা বলেন, ‘‘এই সময়ে পথকুকুরে বাচ্চা প্রসব করে। কুকুরছানাগুলি কিছু দিন পরেই এলাকায় ঘুরতে শুরু করে। শহরের দিকে ওদের থাকার জায়গা আরও সীমিত। বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। আশপাশ নোংরা করে। অনেকেই উটকো ঝামেলা মনে করেন। আশঙ্কা থাকে ছাগল, হাঁস, মুরগি খেয়ে ফেলার। তাই অত্যাচার চলে।’’
তবে পুলিশ বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় রাস্তায় মোটরবাইক দেখলেই কুকুর তাড়া করে। সে সব এড়াতে কেউ নিষ্ঠুর পদক্ষেপ করছেন কি না সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব সময় যে কেউ মেরে ফেলছেন, এমনটা নাও হতে পারে। বাড়িতে ইঁদুর মারা বিষ প্রয়োগের পরে মৃত ইঁদুর খেতে গিয়ে কুকুরছানা অসুস্থ হওয়ার ঘটনাও দেখছি।’’ এ বিষয়ে একমত নন পশু চিকিৎসকেরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সিউড়ির ভেটেনারি পলিক্লিনিকের এক সময়ের ভেটেনারি সার্জেন বলেন, ‘‘এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কুকুরের খাদ্য তালিকা সীমিত। খাবারে বিষ মিশলে তবেই এক সঙ্গে কতগুলো কুকুর মারা যেতে পারে।’’
পশুপ্রেমী সেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক রাজর্ষি ঘোষ বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তে সিউড়িতে মৃত কুকুর ছানাগুলির মৃত্যুর পিছনে বিষক্রিয়া সামনে এসেছে। তবে কী ধরণের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে তা জানতে নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’