প্রতীকী ছবি।
বন্ধ কিসানমান্ডিতে এ বার কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়তে শিল্পোদ্যোগীদের ডাক দিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্য থেকে জেলাকে এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের তরফে বণিক সংগঠনের সঙ্গে এ নিয়ে সম্প্রতি এক দফা আলোচনাও হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বণিকসভা, পোল্ট্রি ফেডারেশন, রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের মতো বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ভিডিও কনফারেন্স’-এ আলোচনা করেন। বণিক সংগঠনগুলি বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। তবে বিরোধীরা এ ব্যাপারে বিঁধছেন তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক বলেন, “কিসানমান্ডিগুলিতে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে।’’
বাঁকুড়া জেলায় মোট ন’টি কিসানমান্ডি রয়েছে। যার মধ্যে দু’-তিনটি বাদে সবগুলিই প্রায় বছরের বেশির ভাগ সময়ে বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ। অথচ, বন্ধ কিসানমান্ডিগুলির জন্যও প্রতি মাসে বিদ্যুৎ খরচের বিল আসছে লক্ষাধিক টাকা। যা মেটাতে হয় কৃষি বিপণন দফতরকে। তাই মান্ডিগুলি চালু রাখতে শিল্পোদ্যোগীদের ‘লিজ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বছরখানেক আগেই জেলা প্রশাসন নিয়েছিল। কিন্তু তখন শিল্পোদ্যোগীদের তরফে সে ভাবে সাড়া মেলেনি। এ বার রাজ্যের তরফে ফের সেই উদ্যোগ হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কিসানমান্ডিগুলিকে আংশিক ও সম্পূর্ণ— দু’ভাবেই ‘লিজ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হিমঘর, রাইসমিল, ময়দা মিল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সংক্রান্ত কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করার বিষয়ে শিল্পোদ্যোগীদের বলা হয়েছে। ‘লিজ’ নিতে আগ্রহীদের জেলা শিল্প দফতরে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
বাঁকুড়ার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সচিব শান্তনু বিশ্বাস বলেন, “কয়েক বছর ধরেই জেলা থেকে কিসানমান্ডিগুলিকে ‘লিজ’ দেওয়ার জন্য আলোচনা চালানো হচ্ছে। তবে সে ভাবে আমরা সাড়া পাইনি। এ বার রাজ্যের তরফে এই উদ্যোগ দেখে শিল্পোদ্যোগীদের সাড়া মিলবে বলেই আমরা আশাবাদী।”
যদিও শিল্পোদ্যোগীদের তরফে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, কিসানমান্ডিগুলির ভাড়া কত হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে প্রশাসন এখনও কিছু জানায়নি। কোনও প্রকল্প গড়লে সেখানে নতুন নির্মাণ করা বা নির্মিত অংশ ভাঙার দরকার থাকলে অনুমতি মিলবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয় তাঁদের একাংশের কাছে। এ ছাড়া, উদ্যোগীরা সরকারি ভর্তুকি পাবেন কি না তা নিয়েও ‘ধোঁয়াশা’ রয়েছে কারও কারও।
‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “প্রশাসন আমাদের কাছ থেকে কিসানমান্ডিকে ঘিরে শিল্প গড়ার প্রস্তাব চেয়েছে। শিল্প গড়ার প্রস্তাব আমরা তৈরি করছি। তবে আমাদের বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। রাজ্যকে লিখিত ভাবে জানাব। সব কিছু ঠিক ভাবে না জেনে শিল্পোদ্যোগীরা সিদ্ধান্ত নেবেন না।”
কৃষকদের ফসল বেচা-কেনার জন্য ঠিকমতো পরিকাঠামো যুক্ত বাজার গড়ে দিতেই কিসানমান্ডিগুলি গড়া হয়েছিল। তবে কিসানমান্ডিগুলির জায়গা নির্ধারণ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। লোকালয় থেকে দূরে বাজারগুলি গড়া হচ্ছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ তুলেছিলেন অনেকে। সেখানে বাজার কতটা জমবে বা চাষিরা আদৌ কিসানমান্ডিতে যেতে উৎসাহী হবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের অভিযোগ, “পরিকল্পনাহীন ভাবে কিসানমান্ডিগুলি তৈরি করে এখন খেসারত দিতে হচ্ছে। কৃষিপণ্যের ব্যবসা বেসরকারিকরণ করতে চাইছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারও সে পথেই হাঁটছে।”
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের দাবি, “যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই এমন জায়গায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রথমে কিসানমান্ডি বানানো হল। সেগুলিকে চালুও করা গেল না। রাজ্য সরকারের নিজেদের ভুল বুঝতে এত দিন সময় লেগে গেল! মাঝখান থেকে সাধারণ মানুষের করের টাকা নষ্ট হল।”
রাজ্য এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ় কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান তথা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস বটব্যালের পাল্টা দাবি, “কিসানমান্ডিগুলির পরিকাঠামো খুবই উন্নত। এখানে কৃষিভিত্তিক প্রকল্প গড়ে উঠলে জেলার অর্থনীতি উন্নত হবে। বিরোধীরা কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন।”