ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র।
প্রকাশ্য দিবালোকে এক দম্পতির কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। শনিবারের ওই ঘটনার পরে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দুষ্কৃতীদের দেখা গেলেও এখনও পর্যন্ত তারা ধরা না পড়ায় উদ্বেগে ওই দম্পতি, স্থানীয় বাসিন্দারাও। পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের ধরতে সব রকম ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার শান্তিনিকেতনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে এসেছিলেন লাভপুরের বাসিন্দা পেশায় বিদ্যুৎকর্মী মিসির রায় ও তাঁর স্ত্রী মীরা রায়। তাঁদের আদি বাড়ি পুরুলিয়ায়। কর্মসূত্রে তিনি স্ত্রী ও তাঁর ছোট ছেলেকে নিয়ে লাভপুরের ফুল্লারাতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁদের তিন বছরের নাতি আয়ুষ বেশ কিছুদিন ধরেই পায়ের সমস্যায় ভুগছে। তাই তার ভাল চিকিৎসার পাশাপাশি বাজারে অল্পস্বল্প ঋণ পরিশোধ করার জন্য মিসিরবাবু শান্তিনিকেতনের ওই ব্যাঙ্কে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ নেন।
সেই ঋণের টাকা বাবদ শনিবার ব্যাঙ্ক থেকে আড়াই লক্ষ টাকা তুলে বেরোতেই হঠাৎই নিমেষের মধ্যে দুই দুষ্কৃতী মীনাদেবীর হাতে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে বোলপুর শহরের দিকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এরপরই ওই দম্পতিদের চিৎকারে আশপাশের লোক জড়ো হয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে সেই স্থান থেকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনা জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় এলাকায়। কিছুদিন আগেই জেলা সদর সিউড়িতে একটি ঋণদানকারী সংস্থায় লুঠের চেষ্টায় গুলি চলার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাতেও দুষ্কৃতীরা এখনও ধরা পড়েনি। তার পরে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত শহরে এমন ঘটনায় সন্ত্রস্ত বাসিন্দারা।
ঘটনার খবর পেয়ে তদন্তে আসে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, তদন্তকারীরা প্রত্যক্ষদর্শী ও দম্পতির কাছ থেকে সবকিছু শোনার পর ব্যাঙ্কের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের ধরতে বেরিয়ে পড়েন। শনিবার দুপুর থেকে রাতভর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানোর পরেও হদিস মেলেনি দুষ্কৃতীদের। পুলিশের দাবি, এই ঘটনায় যে মোটরবাইক ব্যবহার করা হয়েছে তার সঙ্গে পুরনো বেশ কয়েকটি ঘটনার যোগ রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ যে দুষ্কৃতীদের দেখা গিয়েছে তারাও স্থানীয় নয় বলে মনে করছে পুলিশ। তাই এর সঙ্গে বাইরের কোনও চক্রের যোগ রয়েছে বলে মত পুলিশের। বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায় বলেন, “পুলিশ ইতিমধ্যে একটি বাইক দুর্গাপুর থেকে আটক করেছে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন তিন জনকেও আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
ঋণ করা বিপুল টাকা হারিয়ে দিশাহারা ওই দম্পতি। মীরাদেবী বলেন, “আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ, এত টাকা কোথায় পাব? তাই নাতির চিকিৎসা করানো ও বাজারে বেশ কিছু ধার পরিশোধ করার জন্য আমরা ঋণ করেছিলাম। কিন্তু সেই টাকার বড় অংশ চলে গেল। জানিনা সেই টাকা উদ্ধার হবে কি না।” মিসিরবাবু বলেন, “কিছু বুঝে উঠার আগেই নিমেষের মধ্যেই সবটা কী ভাবে ঘটে গেল তা বুঝে উঠতে পারলাম না। এখনও আমার মনে হচ্ছে পুরোটাই যেন সাজানো ছিল। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ এই ছিনতাইয়ের ঘটনা দ্রুত কিনারা করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।”