পুরুলিয়ার সাহেববাঁধ। নিজস্ব চিত্র।
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সাহেববাঁধের ফাইল, দাবি এমনই। তার জেরে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। বৃহস্পতিবার সাহেববাঁধ বিষয়ক তথ্য প্রকাশ্যে আনার দাবিতে পুরুলিয়া পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পুর-প্রশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। পুরসভার যদিও দাবি, বিজেপি বিষয়টি নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করছে। পুর-প্রশাসক নবেন্দু মাহালির মন্তব্য, “শহরের বাসিন্দা হিসেবে আমিও জানতাম, সাহেববাঁধ জাতীয় সরোবরের তকমা পেয়েছে। কিন্তু কোনও নথি ছাড়া, নিশ্চিত ভাবে তা বলি কী করে?”
বিজেপির পুরুলিয়া শহর মণ্ডল সভাপতি সত্যজিৎ অধিকারীর দাবি, “সাহেববাঁধের সঙ্গে শহরবাসীর আবেগ জড়িত। সরোবরটি জাতীয় সরোবর হিসাবে ঘোষিত হয়ে থাকলে, তার নথি পুরসভার কাছে থাকা উচিত। তা ছাড়া, সরোবরের উন্নয়নে এ পর্যন্ত কত অর্থ বরাদ্দ হয়েছে এবং কী ভাবে তা ব্যয় হয়েছে, তা জানার অধিকারও শহরবাসীর রয়েছে।” কর্মসূচিতে ছিলেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গা, ওবিসি মোর্চার জেলা সভাপতি সুভাষ মাহাতো প্রমুখ।
সাহেববাঁধের পাড়ে বসানো একটি ফলক অনুযায়ী, ২০১০-র ২৫ এপ্রিল সাহেববাঁধকে জাতীয় সরোবর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলকটির আবরণ উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন বিধায়ক নেপাল মাহাতো। সে সময়ে পুরসভায় ক্ষমতাতেও ছিল কংগ্রেস। নেপাল এ দিন বলেন, “পুরুলিয়ার ফুসফুস হিসাবে পরিচিত সাহেববাঁধকে জাতীয় সরোবর হিসেবে ঘোষণার দাবি পুরুলিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই দাবি মেনে ২০১০-এ কেন্দ্রীয় সরকার সাহেববাঁধকে জাতীয় সরোবরের তকমা দিয়েছিল। কেন্দ্রের তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রী নমোনারায়ণ মিনা সাহেববাঁধকে জাতীয় সরোবর হিসাবে ঘোষণাও করেন।”
সরোবরের উন্নয়নে কেন্দ্র অর্থও বরাদ্দ করেছে বলে জানিয়ে নেপালের সংযোজন, “পুরসভার কাছে নথি থাকার কথা। কেন তা নেই, পুরসভাই বলতে পারবে। তা ছাড়া, যে সব দফতরের মাধ্যমে বিষয়টি হয়েছিল, সে দফতর থেকেই নথি মিলবে।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “কোনও দুর্নীতি চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফাইল সরিয়ে ফেলা হয়েছে, এমন নয় তো!” সে সময়ে দায়িত্বে থাকা, পুরসভার প্রাক্তন বাস্তুকার পঞ্চানন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, “সাহেববাঁধ জাতীয় সরোবর হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারই ঘোষণা করেছিল। সরোবরের উন্নয়নে কাজও হয়েছে।”
পুর-প্রশাসক নবেন্দু মাহালির কথায়, “দায়িত্ব পাওয়ার পরে, সাহেববাঁধের উন্নয়ন নিয়ে আমিও আগ্রহী ছিলাম। সে জন্য সাহেববাঁধের ফাইলের খোঁজ নিই। তবে পুরসভায় কোনও ফাইল খুঁজে পাইনি।”
পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে পাল্টা বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন নবেন্দু। তাঁর দাবি, “আমিই বিভিন্ন জায়গায় কথা প্রসঙ্গে বলেছি যে, ফাইলের খোঁজ করছি। এটা অনেকেই জানেন। বিষয়টি জেনে বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।” তাঁর আরও প্রশ্ন, “স্থানীয় বিধায়ক তো ওদের দলেরই। পুরসভায় বিরোধী দলনেতাও ছিলেন। নিশ্চয়ই বিষয়টি জানেন। এ প্রশ্নের জবাব তো তাঁর কাছ থেকেও মিলতে পারে!” পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ নিয়ে তথ্য জানতে পারেন, মন্তব্য তাঁর।
পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক তথা পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “পুরসভার ফাইল কোথায় আছে, তা তো পুরসভায় যাঁরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে, তাঁদেরই জানার কথা। আমি বিরোধী পক্ষে ছিলাম। কী করে জানব? পুর-প্রশাসক বরং দলের যাঁরা পুর-প্রধানের কুর্সিতে ছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।”