চলছে পিঠে তৈরি। নিজস্ব চিত্র
মেলার মাঠে পিঠে তৈরি করে সেখানেই হই হই করে বিক্রি। যার শুরুটা হয়েছিল ১৪ বছর আগে। মহম্মদবাজারের স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর চার মহিলা মিলে গড়ে তুলেছেন ‘দিদির হেঁশেল’। এ বার তাঁরা স্টল দিয়েছেন পৌষমেলাতেও।
পৌষমাস মানেই পিঠের মাস। হেমন্তে নতুন ধান উঠলেই হয় নবান্ন। তার পরেই পৌষমাস থেকে বসন্তের আগমন পর্যন্ত চলে পিঠে খাওয়া। বাংলার ঘরে ঘরে পিঠের চল বহু প্রাচীন কাল থেকেই। কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্যচরিতামৃতেও চাল গুঁড়ো, গুড়, নারকেলের মিশ্রণে তৈরি এই মিষ্টান্নের উল্লেখ আছে। নতুন ধানের চালে যে ঘ্রাণ ও আদ্রতা থাকে, তাতে জমে পিঠে। আগে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়ো বানানো হতো। এখন ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে।
স্টলে গিয়ে দেখা গেল, মেশিনের চাল গুঁড়ো থেকেই তৈরি করা হচ্ছে রকমারি পিঠে। দুধে চুবিয়ে তৈরি হয় দুধপিঠে বা দুধপুলি। চিনি বা গুড়ের সিরায় ও খেজুরের রসে ভিজিয়ে তৈরি করা হচ্ছে রস পিঠে। ফারপুলি, চন্দ্রপুলি, ভাপাপিঠে, আস্কেপিঠে, পাটিসাপটা, গোকুলপিঠে, মালপোয়া, পুলিপিঠে। সবলা মেলা, বইমেলা, কৃষিমেলা থেকে শুরু করে প্রায় সব মেলাতেই পিঠেপুলির স্টল করে দিদির হেঁশেলের কারিগররা বানাচ্ছেন পাটিসাপটা, দুধপুলি, গোকুল পিঠে, মালপোয়া।
চালের গুঁড়ি তাওয়ায় দিয়ে গুলুনিকে প্রথমে গোল আকার দেওয়া হচ্ছে। তার পরে তাতে মিষ্টিপুর ভরে ভাঁজ করে বানানো হচ্ছে পাটিসাপটা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের পিঠেপুলির পোশাকি নাম দিদিদের হেঁশেল। ২০০৫ সালে মহম্মদবাজারের কেওটপাড়ার চার মহিলা মিলে দল করেন। ঠিক করেন মেলা ঘুরে ঘুরে স্টল বানিয়ে পিঠে বিক্রি করবেন। সেই মতো কাজে লেগে পড়েন ববি ধীবর, টুম্পা ধীবর, রেখা ধীবর ও কবিতা ধীবর। তৈরি করতে থাকেন নানা রকম পিঠে। পাটিসাপটা, দুধপুলি, মালপোয়া, গোকুল পিঠে, চুষির পায়েস বানিয়ে বিক্রি শুরু করতেই ব্যাপক সাড়া মেলে। জেলার যে কোনও মেলায় তাঁদের পিঠের স্টলে লাইন দিয়ে পিঠে কেনেন ক্রেতারা।
ববি ধীবর বলেন, ‘‘২০০৫ সাল থেকে পিঠেপুলির স্টল চলছে। পৌষমেলাতেও স্টল বানিয়েছি। তা ছাড়াও সবলা মেলা, কৃষি মেলা, বইমেলা, যুব উৎসব, গান মেলা সহ বিভিন্ন মেলায় স্টল করা হয়। স্টলেই টাটকা পিঠে তৈরি করে বিক্রি করা হয়।’’