Madhyamik Examination

সহপাঠীর কাঁধে চেপে মাধ্যমিকে মনিসুর

মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মিল্কিডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মনিসুর। বন্ধুদের সহযোগিতাতেই প্রতিদিন পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছে।

Advertisement

সব্যসাচী ইসলাম 

মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৫২
Share:

লড়াকু: বন্ধুর কাঁধে। এ ভাবেই লেখে মনিসুর (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

জন্ম থেকেই হাত-পা অসাড়। পেন ধরতেও লাগে দু’হাতের তালমিল। চলাফেরার এতটুকু শক্তি নেই। পরিবর্তে আছে অফুরাণ প্রাণশক্তি আর সহপাঠীদের আন্তরিকতা। সেই সহপাঠীদের কাঁধে চেপেই স্কুলের দিনগুলি পার করে এ বার মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা দিল প্রায় ৮০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী মনিসুর শেখ।

Advertisement

মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মিল্কিডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মনিসুর। বন্ধুদের সহযোগিতাতেই প্রতিদিন পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা চলার মাঝে সহপাঠীর কাঁধে চেপে যেতে হয়েছে বাথরুমেও। মাড়গ্রাম থানার ছোট কার্তিকচুংড়ির বাড়ি থেকে চাঁদপাড়ার স্কুলের দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। বাড়ির সামনে থেকে আট কিলোমিটার টোটোতে চেপে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে মনিসুর। সেই টোটো থেকেই বন্ধুরা কাঁধে তুলে নিয়ে বসিয়ে দেয় পরীক্ষাকেন্দ্রের নির্দিষ্ট জায়গায়। প্রথম পরীক্ষার দিনে দোতলা ঘরের উপরে সিট পড়েছিল। কিন্তু, অসুবিধা কথা ভেবে সেন্টার কর্তৃপক্ষ নিজের ঘরে আলাদা করে বসার ব্যবস্থা করে দেয়।

বুধবারের পরীক্ষা শেষে মনিসুর জানাল, দুটো হাত দিয়ে পেন ধরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন সম্পর্কিত এক কাকা। তার কথায়, ‘‘পুরো তিন ঘণ্টা লিখতে পারি না। ক্লান্ত হয়ে পড়ি।’’ রাইটার নেওয়া হয়নি কেন? পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে কামরুল শেখ বলেন, ‘‘আমরা জানতাম না ছেলে রাইটার পেতে পারে। স্কুলের তরফে জানানো হয়নি।’’ মিল্কিডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণব মাহারা জানান, স্কুলের পরীক্ষায় মনিসুর নিজে হাতেই লিখেছে। কোনও দিন পরিবার বা কারও তরফে অসুবিধা কথা জানানো হয়নি। তাই মনের জোরকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন মধ্যশিক্ষা দফতরের তরফে কোনও সহযোগিতাও পায়নি। সংবাদমাধ্যমের কাছে খবর পেয়ে মহকুমার (পর্ষদের) তিন কনভেনর খবর নিতে শেষ দিনে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে কথা বলেন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে।

Advertisement

কিন্তু, স্কুলের সময় হোক বা মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা—নিজেদের কাজ সামলে দিনের পর দিন সহপাঠীকে কোলে-পিঠে নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে কোনও আপত্তি করেনি আব্দুল সাহিল ও ইব্রাহিম শেখেরা। ওরা বলে, ‘‘মনিসুর আমাদের বন্ধু। আমরা তো খুশি হয়েই ওর জন্য এ সব করি।’’ বন্ধুদের পাশে পেয়ে মনিসুরও শুনিয়েছে ইচ্ছের কথা। বলছে, ‘‘পড়াশোনা করে বড় হতেই হবে।’’ ছেলের ইচ্ছের কথা জেনে ঘুম উবেছে বাবা কামরুল শেখের। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে এই বছরই উচ্চমাধ্যমিক দেবে। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বলছেন, ‘‘সামান্য আয়ে সংসারই ভাল ভাবে চলে না। কী করে সব সন্তানের লেখাপড়া করাব জানি না।’’

মা গুলসুননেহার বিবি বলছেন, ‘‘অনেক প্রতিবন্ধী মানুষকে দেখি ভিক্ষা করে। আমরা ছেলেকে শিক্ষিত করতে চেয়েছি। ওকে যেন কোনও দিন কারও কাছে হাত পাততে না হয়।’’ চাঁদপাড়া স্কুলের শিক্ষক নুরুল হক অবশ্য পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement