—ফাইল চিত্র।
বিষ্ণুপুর মেলা আরও মসৃণ ভাবে পর্যটকদের দেখার ব্যবস্থা করতে এ বার একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিচ্ছে মহকুমা প্রশাসন। গাড়ি নিয়েই যাতে হোটেল-লজের কাছে পর্যটকেরা পৌঁছতে পারেন, সে জন্য এ বার রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের কড়াকড়িও কিছুটা আলগা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল।
প্রতি বছরের মতো এ বারও ২৩ ডিসেম্বর থেকে বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কিছু হোটেল ও লজের অর্ধেক ঘর মেলা দেখতে আগ্রহী পর্যটকেরা ‘বুকড’ করে ফেলেছেন।
তবে কি প্রতিবারের মতো থাকার জায়গার অভাবে মেলা না দেখতে পেয়ে এ বারও ফিরে যেতে হবে পর্যটকদের?
বিষ্ণুপুর শহর ও লাগোয়া এলাকায় লজ ও হোটেলের সংখ্যা (বেসরকারি প্রায় ৩৪টি ও সরকারি ৬টি) গত কয়েক বছরে বাড়লেও থাকার সমস্যা কেন হচ্ছে?
হোটেলে ঘরের অভাবের অভিযোগ মানতে নারাজ বিষ্ণুপুর হোটেল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অসিতকুমার চন্দ্র। তাঁর দাবি, ‘‘প্রতি বছর শুনছি হোটেলে জায়গা না পেয়ে পর্যটকেরা ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু এ কথা পুরোপুরি সত্যি নয়। কয়েকটা বেড খালি থাকেই। আসল সমস্যা হল মেলার দিনগুলিতে সকাল থেকেই রাসমঞ্চ, কলেজরোড, লালবাঁধের পথে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। হোটেলে গাড়ি নিয়ে যেতে না পারায় পর্যটকদের একাংশ ফিরে যান। হোটেল বা লজগুলিতে পর্যটকেরা যাতে বিনা বাঁধায় আসতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করা দরকার প্রশাসনের।’’
তাঁর মতে, বিষ্ণুপুরের পর্যটন সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লজগুলি সম্পর্কে তথ্য থাকলে পর্যটকদের যোগাযোগ করার সুবিধা হবে। একটি বেসরকারি লজের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার অভিজিৎ সরকার জানান, ‘গুগল ম্যাপ’ দেখে অনেক পর্যটক বিষ্ণুপুর আসেন। কিন্তু অনেক সময় ম্যাপ ধরে আসতে গিয়ে রাস্তায় ‘নো এন্ট্রি’ দেখে বিভ্রান্ত হন তাঁরা। গত বছর মেলায় আসা কয়েকজন এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন।
তবে রসিকগঞ্জ, রেলস্টেশন ও পোকাবাঁধ লাগোয়া লজগুলিতে যাওয়ার পথে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। রসিকগঞ্জের এক লজ মালিক সুমন্ত দাসের দাবি, “বুকিং করে না এলে মেলার সময়ে আমাদের লজে ঘর পাওয়া মুশকিল।’’ বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সৌরভ পান বলেন, “মেলা ও বড়দিনের সময়ে আমাদের ২৭টি ঘরই সংরক্ষিত হয়ে যায়।’’ বিষ্ণুপুর মেলা কমিটির সভাপতি শ্যাম মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘পর্যটকদের এই শহরে থাকার অভাব হবে না। প্রয়োজন পর্যটকদের কাছে হোটেল, লজগুলি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার। সেই চেষ্টা প্রশাসনিক স্তরে নেওয়া হবে। পর্যটকেরা যাতে হোটেল ও লজে পৌঁছতে পারেন, প্রশাসনিক ভাবে সেই ব্যবস্থা করা হবে।’’
তবে এ বার মেলায় পর্যটকদের সুবিধার জন্য একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। এসডিও বলেন, ‘‘মেলার দিনগুলিতে অন্য বছরের মতো যাতে গাড়ি আটকে না দেওয়া হয়, তা দেখা হবে। কোন গাড়ি কোথায় পার্কিং করতে হবে, তা আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া হবে।’’ এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, “মেলা তো পর্যটকদের জন্যই। তাই তাঁদের কথা ভেবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অযথা কাউকে হয়রান করা যাবে না। মেলায় যথেষ্ট পুলিশ থাকবে পরিষেবা ও নিরাপত্তা দিতে। প্রশাসনিক বৈঠকেই সব কিছু ঠিক
করা হবে।”