প্রতীকী ছবি
সরকারি পরিবহণ সংস্থার বাসের মধ্যে কন্ডাক্টরই এক নাবালিকার যৌন নিগ্রহ করছে। সম্প্রতি এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসে লাগানো সিসি-ক্যামেরাগুলি ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি প্রতিটি বাসে হেল্পলাইন নম্বর লিখে রাখার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেন দফতরের কর্তারা। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার এমডি কিরণকুমার গোদারা বলছেন, ‘‘যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর জন্য আলাদা ওয়েবসাইট এবং হেল্পলাইন নম্বর চালু রয়েছে। নতুন বাসগুলিতে সেই হেল্পলাইন নম্বর লেখা আছে। যাতে প্রতিটি বাসে হেল্পলাইন নম্বর লেখা হয় সেটা দেখছি।’’
২০ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার আসানসোল থেকে গঙ্গারামপুরগামী দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার এক বাস কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। পরিবহণ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, পানাগড় থেকে মায়ের সঙ্গে সরকারি বাসে ওঠেছিল ওই নাবালিকা। ভিড় বাসে বসার জায়গা না পাওয়ায় কন্ডাক্টর তার পাশের জায়গা নাবালিকাকে ছেড়ে দেন। তার পরেই প্রৌঢ় ওই কন্ডাক্টর নাবালিকার সঙ্গে অশালীন আচরণ করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। বাসটি সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে ২টো ৩৫ মিনিটে ঢোকার কিছু আগে সেই অভিযোগ সামনে আসে। সিউড়িতে বাস থামতেই যাত্রী ও বাসস্ট্যান্ডে থাকা লোকজন তাকে মারতে উদ্যত হয়। খবর পেয়ে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার কাউন্টার থেকে কর্মী, আধিকারিকরা ছুটে এলে সকলের নাগাল এড়িয়ে অভিযুক্ত তখনকার মতো গা ঢাকা দেয়।
এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে সরকারি পরিবহণ সংস্থার অফিসে বা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাননি নাবালিকার মা। আত্মীয়, পরিজনদের সঙ্গে সিউড়ি ২ ব্লকের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু, গোটা ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান সিউড়ি বাস টার্মিনাসে কর্তব্যরত কর্মীরা। অন্য যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সেই জন্য ২টো বেজে ৫০ মিনিটে গন্তব্যের উদ্দেশে বাসটি কন্ডাক্টর ছাড়াই রওনা হয়। সে দিন আর ওই গাড়িতে নতুন করে যাত্রী তোলা হয়নি। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার সিউড়ি ডিপো ইন চার্জ তাপস মুখোপাধ্যায় জানান, ঘটনার কথা শোনামাত্র ওই কন্ডাক্টরকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে। সিউড়ি থানাকেও জানানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্পষ্ট করে কোনও তথ্য না থাকায় তদন্ত এগোয়নি।
দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের ৮০-৮৫টি বাস সিউড়ি ছুঁয়ে যায়। তার মধ্যে বেসরকারি সংস্থা লিজ নিয়েছে প্রায় ২৫টি বাসকে। সেখানে চালক সরকারি সংস্থার হলেও কন্ডাক্টর ঠিকা বা লিজ নেওয়া সংস্থার হাতে থাকে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে লিজপ্রাপ্ত সংস্থাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার আধিকারিকরা বলছেন, ‘‘বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের দুর্গাপুর অফিসে ওই বাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তার পর দিন থেকেই সরকারি বাসের মধ্যে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলি চেক করা হচ্ছে। সিউড়িতেও বিভিন্ন বাসে ক্যামেরার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটলে অভিযুক্তের শাস্তি হয়। বাসের মধ্যে হেল্পলাইন দেওয়ার ভাবনার পিছনেও একই উদ্দেশ্য।