‘ধানে থোড়ই হয়নি, জামা কিনব কী করে’

অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া। গ্রাম বা মফস্‌সল শহরেও দুর্গাপুজোর মুখে দৈনন্দিন বাজারেও মন্দার কোপ পড়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি কেমন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত বছর জেলায় আউশ এবং আমন তথা বর্ষাকালীন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লক্ষ ১২ হাজার হেক্টর।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share:

ভাদ্রের শেষ দিনেও ধানের শিষের দেখা নেই। ছবি: কল্যাণ আচার্য

পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই চিন্তা বাড়ছে লাভপুরের হরানন্দপুরের মিলন হাজরা, নানুরের আলিগ্রামের গণেশ মেটেদের মতো চাষিদের। শারোদৎসবে কী করে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটাবেন, ভেবে আকুল তাঁরা। আসলে ওই সব চাষির পুজোর বাজার মূলত কৃষি-নির্ভর। পুজোর মুখে ওঠা আউশ ধান বিক্রি করেই তাঁরা ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন পোশাক কিংবা সংসারের জন্য নতুন জিনিস কেনেন। পুজোর দিন কটা আনন্দেই কেটে যায়। কিন্তু এ বার সেই আনন্দে বাদ সেধেছে অনাবৃষ্টি।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত বছর জেলায় আউশ এবং আমন তথা বর্ষাকালীন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লক্ষ ১২ হাজার হেক্টর। চাষ হয়েছিল ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর। এ বার ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত ধান পোঁতার উপযুক্ত সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। তার পরে ধান পোঁতা হলে উৎপাদন মার খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ওই সময়সীমার মধ্যে জেলায় ধান চাষ হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য বৃষ্টির ঘাটতিই একমাত্র কারণ বলে কৃষিকর্তাদের দাবি। জুন মাসের শুরু থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা প্রায় ৭০০ মিলিমিটার। হয়েছে মাত্র ৩৯২.৭২ মিলিমিটার। অর্থাৎ ৪৩.২৬ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে। জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, ধানের ঘাটতি পূরণে রবিচাষে জোর দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আউশ-বৃত্তান্ত
• কৃষি দফতর বলছে, অনাবৃষ্টির জন্য এ বার ধান উঠতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লেগে যাবে।
• চাষিরা অবশ্য দাবি করেছেন, অধিকাংশ আউশ ধান উঠতে পুজো পেরিয়ে যাবে। কারণ এখনও পর্যন্ত ধানে থোড়ই আসেনি।
• চলতি মরসুমে বৃষ্টি অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে বিঘের পর বিঘে জমি।

আপাতত এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের বড় অংশের চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। সামনেই পুজো। আগাম বর্ষাকালীন ধান চাষ করেই অধিকাংশ চাষি পরিবারে পুজোর খরচের সংস্থান হয়। অনেকের সারা বছরের ভাত কাপড়েরও সংস্থান হয়। কিন্তু বাস্তব হল, চলতি মরসুমে বৃষ্টি অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে বিঘের পর বিঘে জমি।

সব থেকে সমস্যায় পড়েছেন সেই সব চাষি, যাঁরা আউশ ধানের উপরে নির্ভর করে পুজোর বাজার করেন। গত বছর ৩৬০০ হেক্টর জমিতে আউস ধানের চাষ হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল ৪০৩৫ কেজি প্রতি হেক্টর। গত বছর পুজোর আগে সেই ধানের ফলন তুলে নিতে পারায় চাষিদের মুখে হাসি ছিল। এ বারও চাষ হয়েছে ৩৫০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৪৫০০ কেজি প্রতি হেক্টর। সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ওই ধান উঠে যাওয়ার কথা। কৃষি দফতর বলছে, অনাবৃষ্টির কারণে এ বার ওই ধান উঠতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লেগে যাবে। চাষিরা অবশ্য দাবি করেছেন, অধিকাংশ আউশ ধান উঠতে পুজো পেরিয়ে যাবে। কারণ এখনও পর্যন্ত ধানে থোড়ই আসেনি।

ময়ূরেশ্বরের কুলিয়াড়ার ধীরেন দাস, লাভপুরের দাঁড়কা গ্রামের সনৎ ধীবর কাঠা পাঁচেক করে জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছেন। দু’জনেই বলছেন, ‘‘আউশ ধান তুলে আমাদের পুজোর বাজার হয়। অন্যান্য বছর এই সময় ধানে শিস আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বার থোড়ই হয়নি। কী করে ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনে দেব ভেবে পাচ্ছি না।’’ একই সুরে নানুর ব্লকের আটকুলার বন্দনা মাঝি, আমোদপুরের বৈশাখী সূত্রধরেরা বলেন, ‘‘পুজোর মুখে ওঠা ধান থেকেই আমাদের ভাত-মুড়ির চাল হয়। এ বার ধার করে চালাতে হবে।’’

শুধু চাষিরা নন, ধান দেরিতে ওঠায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলার গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মোড়ের বস্ত্র ব্যবসায়ী আনন্দময় কোলে, নানুরের স্টেশনারি দোকানদার সুভাষ পালের কথায়, ‘‘আমাদের বিক্রিও কৃষি-নির্ভর। ফলন বিক্রি করে চাষিরা পুজোর আগে দোকানে ভিড় করেন। অন্য বছর এতদিনে বিক্রিবাটা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু, এ বার ক্রেতার দেখা নেই। অনাবৃষ্টির

কারণে আমাদেরও মার খেতে হবে মনে হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement