মগ্ন শীতল ফৌজদার। নিজস্ব চিত্র
প্রজন্মের পরে প্রজন্ম বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজপরিবারের দুর্গাপুজোর পটচিত্র এঁকে চলেছে শাঁখারিবাজারের ফৌজদার পরিবার। গত ৩৮ বছর ধরে সে পরম্পরা বয়ে নিয়ে চলেছেন বছর পঞ্চাশের শীতল ফৌজদার। ওই কাজে গর্ব অনুভব করলেও ঐতিহ্য রক্ষা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত শিল্পী। কারণ, তিনি জানান, পরিবারের নতুন প্রজন্মের কেউ পটচিত্র আঁকতে আগ্রহী নন।
রথের পরেই মল্ল রাজপরিবার থেকে নতুন বস্ত্র আসে ফৌজদার পরিবারে। তার পরেই তিনটি পটচিত্র— বড় ঠাকরণ, মেজ ঠাকরণ ও ছোট ঠাকরণ বা ‘পটেশ্বরী’ আঁকা শুরু হয়। পটে আঁকা তিন ‘ঠাকরণ’ ও মৃন্ময়ীর পুজো চলে একই সঙ্গে। তবে তিনটি পটচিত্রে মহিষাসুরের অবস্থান আলাদা।
শীতলবাবু বলেন, “একটি পট তৈরি করতে সময় লাগে আট দিন। তৈরির সময়ে পরিবারের লোকজন নিরামিষ খান। দরজা-জানলা বন্ধ করে পটচিত্র আঁকতে হয়।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমার পরিবারই মল্ল ও অন্য রাজবাড়িগুলির পটচিত্র আঁকে। পরিবারের নতুন প্রজন্মের ছেলেরা সেই কাজে উৎসাহী নয়। তারা অন্য পেশায় যাচ্ছে। আমার অবর্তমানে, অথবা আমি কোনও কারণে কর্মক্ষমতা হারালে, এ পরম্পরা রক্ষা হবে কী করে?’’ পটচিত্র আঁকেন অনেকেই। কিন্তু ঐতিহ্যশালী মল্ল রাজপরিবারের দুর্গাপুজোর পটচিত্র আঁকে শুধু ফৌজদার পরিবার, দাবি শীতলবাবুর।
মল্ল রাজপরিবারের সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহঠাকুর বলেন, ‘‘ফৌজদার পরিবারই আমাদের পুজোর পটচিত্র তৈরি করে। আশা করি, ভবিষ্যতে ওই পরিবারেরই কেউ না কেউ সে কাজ করবেন। যদি তা না-ও হয়, তবে পুজো বন্ধ হবে না। সে ক্ষেত্রে দেবী মৃন্ময়ী তাঁর নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নেবেন।’’
শিল্পী জানান, তিনটি পটচিত্রের মূর্তি ও কাপড়ের রং ভিন্ন। আঁকায় ভেষজ রং ব্যবহার করা হয়। শিমের পাতা থেকে হয় সবুজ রং। পুঁইয়ের বীজ থেকে বেগুনি, হলুদ থেকে হলদে, খড়ি মাটি থেকে সাদা আর ভুষোকালি থেকে কালো রং হয়। লাল রং হয় গিরিমাটি থেকে। এক সময়ে রাজপরিবারের প্রতিনিধিরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পটচিত্র নিতে আসতেন। এখন নিয়ে যান পুরোহিতেরাই।
শীতলবাবু বলেন, “শুনেছি, সেনাবাহিনীতে ফৌজদার ছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। সে সময়ে রাজার নির্দেশেই পটচিত্র আঁকা শুরু হয়। পরম্পরা মেনে রাজ পরিবারের পটচিত্র এখনও এঁকে চলেছি।’’