বাড়িতে। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী।
১৪ মাস জেলে কাটানো প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের জামিন হাই কোর্ট মঞ্জুর করার খবর ছড়াতেই কাকতালীয় ভাবে রাতারাতি শহরে পোস্টার পড়েছিল— ‘কিং ইজ ব্যাক’, ‘খেলা শুরু, আসছে গুরু’। যদিও ওই পোস্টারের সঙ্গে শ্যামবাবুর জামিনের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা কেউ প্রকাশ্যে জানাননি। তবে বুধবার সন্ধ্যায় জেল থেকে যখন শ্যাম বাড়ি ফিরলেন, ততক্ষণে উধাও হয়ে গিয়েছে সেই সব পোস্টার। শ্যামও বাড়ি ঢুকে নীরব। সব মিলিয়ে শহরে ফের চর্চায় শ্যাম।
৯০-এর দশক থেকে বিষ্ণুপুর শহরের বাম-বিরোধী রাজনীতির মূল কারিগর হয়ে উঠেছিলেন শ্যাম। দীর্ঘদিন ছিলেন কংগ্রেসের পুরপ্রধান। পালাবদলের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রীও হন। গত বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। তারপরেই বিষ্ণুপুর পুরসভায় দুর্নীতির তদন্তে ভিজিলেন্স শুরু হয়। তাতে ৫৫টি প্রকল্পে প্রায় ৯ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রকল্পগুলি শ্যাম পুরপ্রধান থাকাকালীন নেওয়া হয় বলে দাবি। গত বছর ২২ অগস্ট শ্যাম গ্রেফতার হন। সদ্য তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে কলকাতা হাই কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চ।
তাঁর জামিনের খবর চাউর হতেই মটুকগঞ্জ, চকবাজার প্রভৃতি জায়গায় ওই পোস্টার কারা লাগিয়ে দেন। এমন পোস্টার অবশ্য বিষ্ণুপুর আগেও দেখেছে। গত পুরোভোটের পরে শ্যাম নতুন করে পুরপ্রধানের দায়িত্ব পেতেই তাঁর ছবি দিয়ে ‘দ্য কিং ইন হিজ ওন কিংডম’ লেখা পোস্টার শহরের নানা জায়গায় ঝুলতে দেখা গিয়েছিল। এ বার তাঁর জামিনের খবর চাউর হতেই ফের ওই পোস্টার দেখা যাওয়ায় শ্যাম রাজনীতিতে ফিরবেন বলে ভেবেছিলেন অনেকে।
কিন্তু পোস্টার উধাও। পোস্টার দিল কারা? সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য স্বপন ঘোষের দাবি, “এই ধরনের কাজ তৃণমূলই করে। ওরাই পোস্টার দিয়েছিল।” যদিও তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শ্যামবাবু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে আমাদের পোস্টার দেওয়ার প্রশ্নই নেই।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ বলেন, “উনি বিজেপিতে যোগ দিলেও দলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। ওই রকম পোস্টার আমাদের সংস্কৃতি নয়।”
এ দিকে শ্যামও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বৃহস্পতিবার শ্যামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি খবরের কাগজ পড়ছেন। তাঁকে ওষুধ এগিয়ে দিচ্ছিলেন মেয়ে। হাতে গোনা কিছু ঘনিষ্ঠ কর্মীই কেবল বাড়িতে ছিলেন। শ্যামের ছেলে শুভ মুখোপাধ্যায় বলেন , “বাবা খুব অসুস্থ। সামনেই মামলার শুনানি আছে। বাবাকে কোনও বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না।”