১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে টোটো চলাচল। রামপুরহাটের ভাঁড়শালা মোড়ে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
এক সপ্তাহে সাত জন। হিসেবটা ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় মল্লারপুর থেকে নলহাটি থানার লোহাপুর পর্যন্ত অংশে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ধরলে সংখ্যা আরও বাড়বে। অভিযোগ, এই হিসেবে দেখিয়ে দেয় ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এ অংশে কার্যত প্রাণ হাতে চালচল করতে হয়। যা এই অংশের পথ-নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অনেকেই এর জন্য প্রশাসনের ‘উদাসীনতাকে’ দায়ী করেছেন। যদিও এ বারও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে এই অংশের মৃতের তালিকায় চোখ বোলালে দেখা যায় এর মধ্যে যেমন সাধারণ পথচারী, খেত মজুর আছেন, তেমনই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, পুলিশ কর্মী, মা ও শিশু আছেন। অনেকের মতে, জাতীয় সড়কে টোটো, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যানের মতো যানের চলাচল এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি, জাতীয় সড়কের ধারে বালি, পাথর, ইটের মতো ইমারতি দ্রব্য মজুত থাকে। ফলে, পথ সঙ্কীর্ণ হয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে একাংশের অভিযোগ। অনেকে আবার জাতীয় সড়কের উপরে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালনাকেও দায়ী করেছেন।
মঙ্গলবার ভোরে জাতীয় সড়কের উপরে দুর্ঘটনায় চার জন খেতমজুর মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা মোটরচালিত ভ্যানে কাজে যাচ্ছিলেন। যা ২০২২ সালের ৯ অগস্ট আটোয় কাজ সেরে ফেরার পথে ৯ জন কৃষি শ্রমিকের মৃত্যুর কথাকে মনে করিয়ে দেয়। যার পরেও জাতীয় সড়কের উপরে টোটো, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যান নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
জাতীয় সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রামপুরহাটের মহকুমাশাসকের প্রশাসনিক ভবন একাধিক বার বৈঠকে টোটো, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তা কাগজকলমেই থেকে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের উপরে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে টোটো, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যান যাতে দাঁড়িয়ে না থাকে, তার জন্য মহকুমাশাসকের নির্দেশনামার বোর্ড ঝোলানো হয়েছে। অভিযোগ, সে নির্দেশ অমান্য করে টোটো, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যান, রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। পাশাপাশি, জাতীয় সড়কের ধারে রামপুরহাট লোটাস প্রেস মোড় থেকে হাসপাতাল পাড়া পর্যন্ত বালি, পাথর, ইট মজুত থাকে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ বা পুরসভা ওই সমস্ত ইমারতি দ্রব্য সরানোর জন্য মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। কিন্তু তার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পরে রামপুরহাট মহকুমা পথ নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান রামপুরহাট মহকুমাশাসক সৌরভ পাণ্ডে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিক, পূর্ত দফতর (সড়ক) ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিক, পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকে জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মহকুমাশাসক জানান। তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে টোটো, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যান চলাচল বন্ধ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষদের দাবি করলেও প্রশাসন থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি জাতীয় সড়কের ধারে কোনওরকম ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক জানান, জাতীয় সড়কের নজরদারির জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মহকুমা প্রশাসনের কাছে তাঁদের রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ সতর্কীকরণ বোর্ড আরও বেশি টাঙানো হবে বলেও জানান মহকুমাশাসক।