SUmmer Heatwave

স্কুলে এগোল ছুটি, কিন্তু ক্রিকেট চলছে তাপপ্রবাহের মধ্যেই

প্রতি দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ খেলা শুরু হচ্ছে। দু’ইনিংস মিলিয়ে মোট ৯০ ওভারের খেলা শেষ হতে প্রায় দুপুর ৩টে বেজে যাচ্ছে। বীরভূমে কয়েক দিন ধরেই চলছে তাপপ্রবাহ।

Advertisement

সৌরভ চক্রবর্তী

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৯
Share:

প্রবল গরমে খেলার মাঝে তেষ্টা মেটাচ্ছে এক খেলোয়াড়। বুধবার সিউড়ির জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র  tapasphoto09@gmail.com

মাঝ আকাশে সূর্য তখন আগুন ঝরাচ্ছে। রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য। বাধ্য হয়ে যাঁরা পথে নেমেছেন, তাঁরাও ছায়ার খোঁজ করছেন। এ সময়েই সিউড়ির জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে ক্রিকেটে খেলা চলছে। সিএবি পরিচালিত এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলা থেকে ১৫ বছরের কমবয়সিরা খেলছেন। তীব্র গরমের মধ্যে খোলা মাঠে এই ক্রিকেট খেলার আয়োজন কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। খেলার আয়োজকদের দাবি, খেলোয়াড়েরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যদিও চিকিৎসকদের দাবি, এই তীব্র গরমে ১৫ বছরের কমবয়সিদের মাঠে নামানো কোনও মতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ অভিভাবকেরা।

Advertisement

বীরভূম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএবি পরিচালিত আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৫ পর্যায়ের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের খেলাগুলি আয়োজিত হচ্ছে সিউড়ি এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগরের মাঠে। প্রতিটি জেলা থেকে বিজয়ী মহকুমাগুলি এই স্তরে অংশগ্রহণ করছে। শিলিগুড়ি,
মালদা, রানাঘাট, লালবাগ, বারুইপুর-সহ সাতটি মহকুমার দল খেলছে সিউড়ির জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা চলবে।

প্রতি দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ খেলা শুরু হচ্ছে। দু’ইনিংস মিলিয়ে মোট ৯০ ওভারের খেলা শেষ হতে প্রায় দুপুর ৩টে বেজে যাচ্ছে। বীরভূমে কয়েক দিন ধরেই চলছে তাপপ্রবাহ। অর্থাৎ চড়া রোদের পুরো সময়টাই মাঠে থাকতে হচ্ছে খুদে খেলোয়াড়দের। তীব্র গরমে সকাল দশটার পরে খুব প্রয়োজন না থাকলে বাড়ির বাইরে যেতে বারণ
করছেন চিকিৎসকেরা। রাজ্য সরকারি স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। সেখানে স্কুল পড়ুয়াদের এ ভাবে তীব্র রোদে খেলানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

যদিও বীরভূম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বিদ্যাসাগর সাউ বলেন, “আমরা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সব ব্যবস্থাই করেছি। মাঠে অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকছে। খেলোয়াড়দের কোনও অসুবিধা হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। পর্যাপ্ত জলের
ব্যবস্থাও আছে যাতে খেলোয়াড়দের এই গরমে কোনও সমস্যা হয় না। আইপিএলের খেলাও তো ভরদুপুরে শুরু হচ্ছে।”

যদিও তথ্য অন্য কথা বলছে। গরমে খেলা চলাকালীন কলকাতার দুই উঠতি ক্রিকেটারের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ সালে উত্তর কলকাতার পাইকপাড়া মাঠে পাইকপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে অনুশীলন ম্যাচে হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বছর একুশের অনিকেত শর্মা। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মৃত্যু। একই ভাবে মৃত্যু হয় সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব বালিগঞ্জ স্পোর্টিংয়ের ক্রিকেটার, কলকাতার একবালপুরের সোনু যাদবের। বাটার মাঠে ব্যাটিং করে আসার পরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন সোনু। মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর পরে ফের সংজ্ঞা হারান। তাঁকে সিএবি-র মেডিক্যাল ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে এসএসকেএমে রেফার করা হয়। কিন্তু, বাঁচানো যায়নি।

এ দিন মাঠে উপস্থিত এক অভিভাবক বলেন, “শিলিগুড়ি তাপমাত্রার সঙ্গে বীরভূমের তাপমাত্রার বিস্তর ফারাক। এই গরমে খেলা আয়োজন না করলেই মনে হয় ভাল হত। কিন্তু আমাদের ছেলেরা সিএবি লিগে নিয়মিত খেলছে। তাই আমাদের বিশেষ কিছু বলার জায়গা নেই।” যদিও তাপমাত্রা নিয়ে ভাবছেন না শিলিগুড়ি দলের কোচ তথা ম্যানেজার সৌম্যজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘‘সিএবি পরিচালিত খেলার সূচি আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকে। একটি খেলা পেছোতে গেলে সম্পূর্ণ সূচিই প্রভাবিত হবে। এই খেলার পরেই আবার বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগও শুরু হবে। আর আমাদের ছেলেরা নিয়মিত কলকাতার মাঠে খেলে। তাই এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ওদের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না।”

সিউড়ির পাশাপাশি জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত মহকুমা স্তরের সিনিয়র আন্তঃক্লাব ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আয়োজিত হচ্ছে রামপুরহাটেও। সেখানেও সকাল ৯টা থেকে ১২টা এবং ২টো থেকে ৫টা পর্যন্ত— দু’টি করে খেলা আয়োজিত হচ্ছে। ২৮ এপ্রিল ফাইনাল হবে। রামপুরহাট মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক তথা সিএবির অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা বছর সিএবি পরিচালিত খেলা, কলকাতার ক্লাব লিগের খেলা-সহ নানা খেলার ঠাসা সূচি থাকে। তাই এই সময়েই মহকুমা ভিত্তিক ক্লাব স্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হচ্ছে। সারা বছর অন্য খেলা থাকায় খেলোয়াড়েরাই এই সময়ে খেলতে চায়। পাশাপাশি, অন্য সময়ে মাঠ পেতেও সমস্যা হয়। আমাদেরও খারাপ লাগে এই রোদে খেলা আয়োজন করতে। কিন্তু কিছু করার নেই।’’

‘মানিয়ে নেওয়ার’ তত্ত্ব মেনে নিতে নারাজ বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “এই তীব্র গরমে খেলোয়াড়দের শরীর জলশূন্য হওয়ার তীব্র আশঙ্কা আছে। ১৫ বছরের খুদেদের সকলেই যে দারুণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে, এমনটা তো সম্ভব নয়। পাশাপাশি, দীর্ঘক্ষণ গরমে থাকলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ঠিকমতো কাজ করে না। যার ফলে হিট স্ট্রোক হয়। সে ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ বরফে স্নান করিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে। কিন্তু জেলার মাঠে তেমন পরিকাঠামো থাকা অনিশ্চিত। আমার মতে এ ধরনের পরিবেশে খেলার আয়োজন অনৈতিক।” যদিও সিএবি-কর্তা নরেশ ওঝার বক্তব্য, ‘‘পর্যবেক্ষক এবং আম্পায়ারদেরই আমরা ‘সিপিআর’ (কার্ডিয়ো-পালমোনারি রিসাসিটেশন) প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তবে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পার্থক্য হল, খেলোয়াড়েরা গরমে খেলতেই অভ্যস্ত। যেটা সাধারণ মানুষ নন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement