সরস্বতী পুজোর আগে আলপনা দিচ্ছে ছাত্রীরা। সিউড়ির অজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
সরস্বতীর পুজোর প্রতিমা নির্মাণের মধ্যে গাছ লাগানোর বার্তা। এ বার এমনই ভাবনা অজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের সাহায্যে শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস বিদ্যালয়েই তৈরি করেছেন এই থিমের প্রতিমা। হাত লাগিয়েছেন সব ধর্মের পড়ুয়ারা। ফলে, এ বারে পুজো সম্প্রীতির বার্তাও বহন করছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, এই পুজোর উদ্বোধনে আসার কথা জেলাশাসক বিধান রায়ের।
প্রতি বছরই বিদ্যালয়ে বাগদেবীর আরাধনা হয়। প্রতি বছরই সমাজ সচেতনতামূলক বিষয়কে কেন্দ্র করে নতুন নতুন থিম হয় এই বিদ্যালয়ে। এ বছর পুজোর থিম আজ থেকে ৩০০ বছর আগে রাজস্থানের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের গাছ বাঁচানোর আন্দোলন। দীনবন্ধু বলেন, ‘‘গাছ কাটার বিরোধিতা করে তাঁরা গাছ জড়িয়ে ধরেছিলেন। এই আন্দোলনের স্মৃতিকেই এ বারের প্রতিমার থিমে ফুটিয়ে তুলছি আমরা।’’ শেষ দু’মাস ধরে রবিবার ও ছুটির দিনে এই প্রতিমা গড়ে তুলেছেন দীনবন্ধুবাবু। আর শিক্ষককে লাগাতার সহায়তা করেছে বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া বাপ্পা সাহা, অভিজিৎ সাহা, পাপ্পু ধীবর, অরিজিৎ পাল, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সিদ্ধার্থ মাহারা, নবম শ্রেণির পড়ুয়া শিবু ধীবর, শঙ্খজিৎ সাহা এবং প্রাক্তন ছাত্র বিশ্বজিৎ ধীবর।
শহরের অন্য বিদ্যালয়ে কেনা প্রতিমায় পুজো হবে। সেখানে এই প্রতিমা এক স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে বলে মত অজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। সোমবারই মূর্তি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ বার মূর্তির সামনে আলপনা আঁকার কাজ শুরু করেছে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। স্থানীয় অজয়পুর, বাঁশজোড়, রামপুরের বৃষ্টি মাহারা, সাহিনা খাতুন, রিজিয়া সুলতানা, সোমা মাহারা, নার্গিস পারভিন, আজিজা খাতুনরা প্রতি বছর একত্রে এই আলপনা আঁকার কাজে হাত লাগায়। পড়ুয়ারা বলে, ‘‘দীনবন্ধুবাবুর কাছেই প্রতিমা বানানোর হাতেখড়ি হয়েছে তাদের। প্রতি বছর একত্রে এই কাজের মধ্য দিয়ে একাত্মতা ও সহযোগিতার যে আবহ তৈরি হয়, তার অনন্য আকর্ষণ রয়েছে।’’
দীনবন্ধু বলেন, “বিদ্যালয়ের এই সরস্বতী পুজো আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয় এলাকার অনেকের আগ্রহ থাকে। তাই আমরাও চেষ্টা করি, স্থানীয় পড়ুয়াদের নিয়ে নিজেরাই পুরো আয়োজনটা করতে। পুজোর আনন্দের সঙ্গে এ বার পরিবেশকে মিশিয়ে দিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিরও চেষ্টা করা হয়েছে।”
প্রধান শিক্ষক আশিস গড়াই বলেন, ‘‘পরিবেশ সচেতনতা বরাবরই আমাদের পুজোর অন্যতম বিষয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিদ্যালয়ের পড়ুয়া-শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সহযোগিতায় দীনবন্ধুবাবু যে ভাবে সরস্বতী পুজোর সঙ্গে এই পরিবেশ সচেতনতাকে মিশিয়ে দিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। পড়ুয়ারাও এর মধ্য দিয়ে পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠবে, এই আশা রাখি।’’