সাঁইথিয়ার বহরাপুর গ্রামে পুলিশ পিকেট। — নিজস্ব চিত্র।
দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে সোমবার থেকে উত্তপ্ত বীরভূমের সাঁইথিয়ার বহরাপুর গ্রাম। গত কাল বোমাবাজির জেরে জখম হন ২ জন। তার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বহরাপুরে। মঙ্গলবার গ্রামবাসীদের একাংশকে এলাকা ছাড়তে দেখা গিয়েছে। যদিও, পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে।
সোমবার দুপুরে বহরাপুরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বোমাবাজিতে আহত হন ২ জন। অভিযোগ, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ওই সংঘর্ষ ঘটে। তার জেরে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। মঙ্গলবার সকালে অনেককেই দেখা গিয়েছে এলাকা ছাড়তে। তাঁদের মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, ‘‘গত কাল কী ঘটেছে, তা বলতে পারব না। তবে ভয় লাগছে। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে থাকি। তাই আপাতত আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি।’’
গ্রাম থেক ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহরাপুর গ্রামের আরও এক মহিলা বলেন, ‘‘আমরা বাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে থাকি। ওরা বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। গত কাল গ্রামে কী হয়েছে বলতে পারব না। তাই আমরা ভয়ে চলে যাচ্ছি।’’
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বহরাপুর এলাকা থেকে মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেটও। নুরজাহান বিবি নামে বহরাপুরের এক মহিলা বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের বাড়িতে থাকতে বলেছে। ওরা সাহস দিয়েছে আমাদের। বলেছে, ‘‘কোনও ভয় নেই।’’ তবে সাবেরের দলের লোকজন আশপাশে আছে। পুলিশের ভয়ে আসতে পারেনি। কিন্তু এখন গ্রাম থেকে অনেকে ভয়ে চলে যাচ্ছে।’’
অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লকের সভাপতি সাবের আলি খান এবং আর এক তৃণমূল নেতা তুষার মণ্ডলের গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সাবেরের বক্তব্য, ‘‘গ্রামে বিশৃঙ্খলা ঘটেছিল। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশ ঠিক করেছে।’’ সংঘর্ষের ঘটনায় যে ১২ জন গ্রেফতার হয়েছে তারা তৃণমূলেরই লোক বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সাবেরের মন্তব্য, ‘‘এখন যেই বিপদে পড়বে সেই তৃণমূল। দলটিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য কয়েক জন নোংরামি করছে। দল তার মূল্যায়ন করবে। এ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। যারা দোষী তারা সাজা পাবে।’’
উদ্ধার হওয়া বোমা নিষ্ক্রিয় করছে বম্ব স্কোয়াড। — নিজস্ব চিত্র।
সাবেরের গোষ্ঠীর পাশাপাশি, অভিযোগ উঠেছে তুষারের দলবলের বিরুদ্ধেও। এ নিয়ে তুষার বলেন, ‘‘ওটা সাবের’দার গ্রাম। এ বার দল বলতে পারবে কী হয়েছে। ব্লক সভাপতি যা বলছেন তা স্বাভাবিক। নিজের গ্রামটাই ওঁর নিয়ন্ত্রণে নেই। আমার ফোন ট্যাপ করলেই বোঝা যাবে আমি কাকে বোমা ছুড়তে বলছি বা অশান্তি করতে বলেছি। আমি শান্তির পক্ষে। এই অভিযোগ শুনে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে। আমি কাউকে গ্রামে গিয়ে মারামারি করতে বলিনি।’’ সাবেরের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যিনি ২০২১ সালে নিজেই বিজেপিকে সাহায্য করেছেন তাঁর থেকে আমি শিক্ষা নেব না। আমি দলের জন্য কী করেছি তা কেষ্ট’দা জানেন।’’
বহরাপুর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বম্ব স্কোয়াড। গ্রাম জুড়ে চালানো হচ্ছে টহলদারি। গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘আমরা গ্রামে পুলিশ পিকেট বসিয়েছি। মানুষকে আশ্বস্ত করছি। পাশাপাশি, গ্রাম জুড়ে এখনও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত না হয়ে ওঠে সেই বিষয়টা আমরা দেখছি।’’