খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। পুরুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
বহরমপুর-কাণ্ডের পরে, পুরুলিয়া শহরের মেসগুলির নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। মেসগুলিতে ‘সিসি’ ক্যামেরা রয়েছে কি না, বিশেষত মেয়েদের মেসগুলিতে কী ধরনের নজরদারি রয়েছে, মেসে যাতায়াতকারীদের পরিচয় লিপিবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা আছে কি না, এমন নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, “শহরের মেসগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সহ অন্য কিছু বিষয় পুলিশ খতিয়ে দেখছে।”
পুরুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার পরে, শহরের আনাচে-কানাচে অসংখ্য মেস তৈরি হয়েছে। এ মুহূর্তে শহরে মোট ৫৪টি মেস রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছাত্রীদের মেস। পুলিশ সূত্রে খবর, নিরাপত্তার প্রশ্নে মেসে বিশেষ করে, সিসি ক্যামেরায় জোর দেওয়া হচ্ছে। ক্যামেরা থাকলেও মেসে যাতায়াতের প্রধান প্রবেশপথের ছবি তাতে ধরা পড়ে কি না, মেসের আবাসিকদের ছবি, পরিচয়, ফোন নম্বর, বাড়ির লোকজনের যোগাযোগের নম্বর ইত্যাদি তথ্যের কোনও রেজিস্টার রয়েছে কি না বা মেসে কোনও কর্মী থাকলে, সে তথ্য মালিকের কাছে রয়েছে কি না, সব দেখে তথ্যপঞ্জি তৈরি করছে পুলিশ।
পাশাপাশি, মেসে বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিরা শুধু নন, মেসের আবাসিকদেরও বাইরে বেরোনো ও মেসে ঢোকার সময় লিপিবদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। মেসে কত জন আবাসিক রয়েছেন, কারা, কত দিন ধরে সেখানে রয়েছেন, তার তথ্য দ্রুত মেস মালিকদের জমা দিতে বলা হয়েছে। আবাসিকের মোবাইল নম্বর, অভিভাবকের নম্বর, সংশ্লিষ্ট আবাসিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া, আবাসিকের ছবি-সহ জমা দিতে হবে সব তথ্য। এ ছাড়া, মেসে শয্যা খালি থাকলে, অনেক সময়ে আবাসিকদের পরিচিত বা পরিজনেরাও এসে থাকেন। কোনও অতিথি মেসে তিন দিনের বেশি থাকলে, তা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে।
যে সব মেসের প্রধান প্রবেশপথে ‘সিসি’ ক্যামেরা নেই, সেখানে দ্রুত তা বসাতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সে কাজে সাহায্যের পাশাপাশি ফুটেজ় সংরক্ষণের বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দেবে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, শহরের ২৩টি ওয়ার্ডে ৩২টি পুলিশ পিকেট রয়েছে। মেসের আবাসিকদের থানার আধিকারিকের যোগাযোগের নম্বরের পাশাপাশি যে এলাকায় মেসটি রয়েছে, সেখানকার পিকেটে থাকা পুলিশকর্মীদের নম্বরও দেওয়া হচ্ছে। কলেজ বা টিউশন থেকে ফেরার পথে বা অন্য কোনও সময়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে, তাতে যোগাযোগ করতে পারবেন আবাসিকেরা।
ইতিমধ্যে মেসগুলিতে গিয়ে পুলিশকর্মীরা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিছু আবাসিক শহরের কিছু কিছু রাস্তায় আলোর অভাবের কথা জানিয়েছেন। বিষয়গুলি পুরসভাকে জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শহরের দু’-একটি মেসের মালিকদের কথায়, “পুলিশ মেসে নিরাপত্তা বাড়াতে রেজিস্টার রাখা-সহ কিছু নিদান দিয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।” পুলিশের উদ্যোগে খুশি, জানিয়েছেন মেসের আবাসিকদের অনেকে।
পুলিশের সঙ্গে কাজে নেমেছে পুরসভাও। পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশের এক্তিয়ারে পড়ে। তবে পুলিশের তরফে পাওয়া মেসের তালিকা ধরে সেগুলির ‘ট্রেড লাইসেন্স’ রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। জল, সাফাই-সহ বাকি পরিষেবা পুরসভাই দেয়। সে মর্মে সমীক্ষা চলছে।”