Poush Mela 2023

মেলায় গোবিন্দভোগ, মুগের বিক্রিতে পৌষমাস

জমিতে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে এক সময়ে কৃষিজমি বন্ধ্যা হয়ে যাবে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১২
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শান্তিনিকেতনে বিকল্প পৌষমেলায় সরকারি স্টল থেকে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত গোবিন্দভোগ চাল ও গোটা মুগের বিক্রির বহর চমকে দিয়েছে খয়রাশোলের চাষিদের। তাতে যেমন খুশি হয়েছেন চাষিরা, খুশি হয়েছেন দফতরের আধিকারিকেরাও।

Advertisement

জানা গিয়েছে, মেলার জন্য সুগন্ধি চাল ও গোটা মুগের ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং এক কিলো গ্রামের প্যাকেট করা হয়েছিল। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর— মেলার এই পাঁচ দিনে সুগন্ধি চাল ও গোটা মুগ বিক্রি হয়েছে প্রায় সাত কুইন্টাল। লাভ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শিবনাথ ঘোষ এবং সহ-অধিকর্তা (সিড সার্টিফিকেশন) সুখেন্দুবিকাশ সাহা বলেন, ‘‘অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে।’’

Advertisement

জমিতে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে এক সময়ে কৃষিজমি বন্ধ্যা হয়ে যাবে। কোনও ফসলই ফলবে হবে না।। তাই চাষিদের বার বার সতর্ক করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। সেই সতর্ক বার্তা মাথায় রেখে পরম্পরাগত চাষে এলাকার চাষিদের উৎসাহিত করেছিল জেলা কৃষি দফতর।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনার সহায়তায় খয়রাশোল ব্লকের রূপসপুর, ছোড়া বড়ঘাটা, নিচিন্তা, খয়রাশোল, সারসা, পানসিউড়ি-সহ মোট ১৯টি মৌজা এক হাজার হেক্টর এলাকায় ধান (মূলত গোবিন্দভোগ) থেকে আনাজ— সব কিছুই জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়েছে। প্রতিটি মৌজা ধরে চাষিদের একটি করে ক্লাস্টার গড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেই সুফল মিলেছে।

সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত সেই ফসল নিয়েই পৌষমেলার সরকারি স্টলে হাজির হয়েছিলেন খয়রাশোলের চাষিদের নিয়ে গড়া (পিকেভিওয়াই ফার্মার্সপ্রডিউসার্স কোম্পানি লিমিটেড) ক্লাস্টারের সদস্যেরা। বড়ঘাটার চাষি সজল মণ্ডল, পানসিউড়ির চাষি প্রণব মণ্ডল, সারসার নীরোজ বাগ, রূপসপুরের আনন্দগোপল মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের সহায়তায় জৈব পদ্ধতিতেই চাষ করেছি। তার যে এতটা ভাল সাড়া পাব ভাবিনি। বাদশা ভোগ এবং মুগ কিলো প্রতি ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি।’’

শুধু খয়রাশোল নয়, ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে রাজনগরের সিসল ফার্মে পড়ে থাকা জমিতে স্থানীয় আটটি স্বনির্ভর দলকে বর্ষার সময় ভুট্টা চাষ উৎসাহ দিয়েছিল প্রশাসন। শুধু ভুট্টাই নয়, অন্তবর্তী ফসল হিসেবে চাষ হয়েছিল বর্ষার বাদাম, বেড়া ফসল হিসেবে অড়হর এবং মেসতার। ভেষজ গুণে ভরপুর লাল টক মিষ্টি ফল মেসতার দিয়ে জ্যাম, জেলি, চাটনি ও ভেষজ চায়ের মতো ভিন্ন স্বাদের উপকরণ নিয়ে মেলার সরকারি স্টলে হাজির ছিলেন আদিবাসী মহিলারা। লাভের মুখ দেখেছেন তাঁরাও।

জানা গিয়েছে, পতিত জমিতে ইতিমধ্যেই ভুট্টা ও বাদম ফলিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। কিন্তু কষ্টসহিষ্ণু মেসতা নামক ভেষজ গুণ সম্পন্ন ফলটি থেকে উপকরণ তৈরি করে লাভের মুখ দেখতেই সেটা থেকে নানা উপকরণ তৈরিতে জোর দিয়েছিল দফতর। রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তথা ওই এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য মোহকি বাস্কি, প্রতিমা মারান্ডি, মেনকা টুডুরা বলেন, ‘‘সামান্য ফলগুলি থেকে তৈরি উপকরণ যে এ ভাবে বিক্রি হতে পারে ধারণা ছিল না। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। রাতভর মেলায় থাকতে পারিনি। থাকতে পারলে আরও লাভ হত।’’

জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা বলেন, ‘‘মেসতা উপকারী ফসল তো বটেই, ভেষজ গুণের জন্য দেশি, বিদেশি নানা পত্রপত্রিকায় এর উল্লেখ রয়েছে। ওই ফল থেকে নানা উপাদান, এমনকি ভেষজ চা তৈরিও সম্ভব। সেটা তৈরি করে যাতে বিক্রিযোগ্য করা যায়, সেই উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ। ভাবনা সফল হয়েছে। ভাল লাগছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement