বাঁকুড়ার এই রেলবস্তি নিয়েই বিতর্ক। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
কেউ চল্লিশ বছর, কেউ আবার তারও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। অথচ, জায়গাটি রেলের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি রেলের প্রতিনিধিরা তাঁদের উচ্ছেদের জন্য বারবার বাড়ি এসে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি জানতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ, “পুনর্বাসন না দিয়ে কোনও ভাবেই উচ্ছেদ করা যাবে না।” টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের সরাসরি সম্প্রচার দেখে কার্যত খুশির রোল পড়েছে বাঁকুড়া শহরের সাহেবডাঙা লাগোয়া ওই রেলবস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে।
মঙ্গলবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বাঁকুড়া শহরের ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা বস্তিবাসীদের উচ্ছেদের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেন্টর অরূপ চক্রবর্তী।
তিনি জানান, রেলের জায়গায় বহু বছর ধরে বসবাসকারী বস্তিবাসীদের উচ্ছেদে উদ্যোগী হয়েছে রেল। তাঁর অভিযোগ, “ওই এলাকায় বিজেপির বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারের নার্সিংহোম রয়েছে। সে কারণেই জমিটি নেওয়া হচ্ছে রেলের মাধ্যমে।” ঘটনাটি শুনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যে জোর করে জমি নেওয়ার নিয়ম নেই। আলাপ-আলোচনায় জমি নিলে আগে পুনর্বাসন দিতে হবে।” জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ ও বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওকে তিনি রেলের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। জেলাশাসক বলেন, “শীঘ্রই রেলের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা হবে।” একই সঙ্গে মমতা অরূপবাবুদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘নিজেরা এ সব ব্যাপারে দেখে নাও। আমিও আগে এই রকম কাজ অনেক করেছি।’’
বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষবাবু অবশ্য এই ঘটনার জন্য তৃণমূল সরকারকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “রেলের জায়গায় বসবাসকারী ওই মানুষদের যাতে পুনর্বাসন দেওয়া হয়, সে জন্য আমি একাধিক বার জেলা শাসককে আর্জি জানিয়েছি। তাঁদের পাট্টা দিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়ি করেই দেওয়া যায়। তৃণমূল সরকার এ নিয়ে উদ্যোগী না হওয়াতেই মানুষগুলি আজও ঘর পেল না।” অরূপবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নোংরা রাজনীতিতে তৃণমূলের নেতারা বরাবরই অভ্যস্ত। এ নিয়ে দু’বছর ধরে রেলকে আবেদন জানিয়ে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া স্থগিত করে রেখেছি।” এ দিন ওই বস্তিতে গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। স্থানীয় যুবক সন্দীপ মণ্ডল বলেন, “উচ্ছেদ রুখতে মাস খানেক আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজনকে নিয়ে অরাজনৈতিক ভাবে রেল বস্তি পুনর্বাসন কমিটি গড়ে আন্দোলন করছি আমরা। তবে তাতেও বেশ একটা স্বস্তিতে ছিলাম না। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে, আমরা ভরসা পেয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা ননীগোপাল চক্রবর্তী, বিষ্টু মালাকারেরা বলেন, “আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা এখানে বাস করছি। এখন আমাদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হলে আর কোথাও আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সবাই খুশি।”