(বাঁ দিকে) অখিল গিরি। (ডান দিকে) উত্তম বারিক। —ফাইল চিত্র।
দিন কয়েক আগে দলের গোষ্ঠীকোন্দলে খুন হয়েছেন মালদহের তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল সরকার। সে নিয়ে শাসকদলে চাপানউতর চলছে। তার মধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরে প্রকাশ্যে চলে এল দুই তৃণমূল বিধায়কের কোঁদল। এক বিধায়ককে দেখে অন্য বিধায়কের লোকজন ‘চোর-চোর’ স্লোগান দিলেন। পাল্টা সেই বিধায়ক বোমা মেরে ‘পাঁচ মিনিটে খতম’ করে দেওয়ার হুমকি দিলেন প্রকাশ্যেই। মঙ্গলবার এ নিয়ে শোরগোল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে।
কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে আড়াআড়ি বিভক্ত জেলা তৃণমূল। মঙ্গলবার সেই বিরোধ আরও স্পষ্ট হল রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি বনাম পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক গোষ্ঠীর লোকজনের গন্ডগোলে। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম পর্বে তৃণমূলের অন্দরে বিভাজনের ছাপ স্পষ্ট।
গত মাসে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তায় কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে নির্বাচন হয়েছে। ১০৮ আসনের মধ্যে ১০১টি আসন পায় তৃণমূল। নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের মধ্যে ১৫ জন ডিরেক্টর হিসাবে নির্বাচিত হবেন। সোমবার ডিরেক্টর নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম পর্বে দেখা গেল ‘জোড়াফুলে কাঁটা’। জানা যাচ্ছে, নির্বাচিত সদস্য চিন্তামণি মণ্ডল-সহ কয়েক জন মনোনয়ন জমা দিতে এলে তৃণমূল নেতা তথা কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির সামনেই তাঁর বাবা অখিলকে ‘চোর-চোর’ স্লোগান দেওয়া হয়। বিক্ষোভের মুখে পড়ে সেই মুহূর্তে সেখান থেকে চলে গেলেও পরে মনোনয়ন জমা দেন চিন্তামণিরা। অন্য দিকে, অখিল এক জনের মোটরবাইকের পিছনে আসনে বসে যাচ্ছিলেন। সেই সময় কয়েক জন (তাঁরাও তৃণমূলের এবং উত্তম-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) প্রাক্তন মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ‘চোর-চোর’ স্লোগান তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় মোটরবাইক। পিছনের আসন থেকে গায়ে শাল মোড়ানো অখিল হুমকি দেন, ‘‘বম্ব চার্জ করব... ৫ মিনিটে বুঝিয়ে দেব। পাঁচ মিনিটে খতম করে দেব। বুঝবে মজা।’’ উত্তম গোষ্ঠীর লোকজন পাল্টা ‘হো-হো’ শব্দ করে ব্যঙ্গ করেন দলেরই বিধায়ক অখিলকে।
এর আগে মহিলা এক বন আধিকারিককে হুমকি দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক অখিল। তার জন্য মন্ত্রিত্বও খুইয়েছেন। তিনি আবার মেজাজ হারালেন দলেরই অন্য গোষ্ঠীর লোকজনের কটূক্তিতে। পরে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অখিল বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে আর কোনও কথা বলব না। যে যা খুশি বলুক।’’ অন্য দিকে, তৃণমূল বিধায়ক উত্তম অখিলের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। তিনি মনে করছেন, এতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। উত্তম বলেন, ‘‘পৌষ সংক্রান্তির মেলা নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে উনি যেটা করেছেন, শুনলাম। ঠিক করেননি। উনি সিনিয়র লোক। তাঁর কাছে এ রকম ব্যবহার আশা করা যায় না।’’ আর এ নিয়ে তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দল বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’