মশাগ্রামে চলছে নতুন লাইন পাতার কাজ। ছবি: উদিত সিংহ।
কাজ আর সামান্যই বাকি। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পেতে চলেছেন হাওড়া যাতায়াতের নতুন রেললাইন। বাঁকুড়া-মশাগ্রাম রেললাইনকে বর্তমানে বর্ধমানের কর্ডলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
রেল সূত্রের খবর, খড়্গপুরের বদলে মশাগ্রাম হয়ে হাওড়া যাতায়াতের দূরত্ব কমবে প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার। স্বাভাবিক ভাবে সময়ও কম লাগবে। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘রেললাইন সংযোগের কাজ শেষ পর্যায়ে। শীঘ্র এই নতুন রেলপথের উদ্বোধন হবে।”
মশাগ্রাম থেকে বর্ধমানের কর্ডলাইনের সংযুক্তিকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন রেলের নানা মহলে তদ্বির করেন বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত বাসুদেব আচারিয়া। একসময় লোকসভায় রেলের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে তাঁর রেলের নানা মহলে যোগাযোগ ভাল ছিল। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে মশাগ্রাম থেকে বর্ধমান কর্ড লাইনের সংযুক্তিকরণের দাবি বারবার জানান তিনি।
ওই রেলপথ চালু হলে তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে বলে জানাচ্ছেন ‘বাঁকুড়া দামোদর রিভার রেলওয়ে পরিবহণ ওয়েলফেয়ার সমিতি’-র সম্পাদক গঙ্গা গোস্বামী। সমিতির আন্দোলনের জেরেই বাঁকুড়া থেকে সোনামুখী পর্যন্ত ন্যারোগেজ লাইন ব্রডগেজে উন্নীত হয়।
সূত্রের খবর, ১৯৯৫ সালে ন্যারোগেজ থেকে ব্রডগেজে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালে কাজ শেষ হয়ে ওই বছরই সোনামুখী পর্যন্ত ট্রেন চালানো শুরু হয়। পরে ধাপেধাপে রেললাইন পাতা হয় মশাগ্রাম পর্যন্ত।বর্তমানে মশাগ্রাম থেকে বাঁকুড়া পর্যন্ত রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণের কাজও শেষ হয়েছে।
গঙ্গা গোস্বামী বলেন, ‘‘মশাগ্রাম থেকে সামান্য দূরেই বর্ধমানের কর্ডলাইন।ওইটুকু জুড়ে দেওয়া গেলে পাত্রসায়র, সোনামুখী, ইন্দাস, বেলিয়াতোড়, রায়নার মতো বহু এলাকার বাসিন্দারা সরাসরি হাওড়া যেতে পারবেন। এই দাবি আদায়ে বাসুদেব আচারিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য।’’
সূত্রের খবর, বাঁকুড়া থেকে খড়্গপুরের হয়ে হাওড়ার দূরত্ব ২৩১ কিলোমিটার। নতুন রেলপথে বাঁকুড়া থেকে হাওড়ার দূরত্ব কমে আসবে ১৮৫ কিলোমিটারে। একই ভাবে আদ্রা থেকে হাওড়ার দূরত্ব ২৮৫ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়াবে ২৩৯ কিলোমিটারে। ওই লাইনের শেষ অংশে দামোদরের উপরে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। রেললাইনের কাজ শেষ হলে নতুন ট্রেন চালানো-সহ অনেক দূরপাল্লার ট্রেনকেও এই রেলপথে চালানো সম্ভব বলে মত রেলকর্তাদের একাংশের।
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘ওই রেলপথের খুবই সামান্য অংশের কাজই বাকি আছে। শেষ হলেই দ্রুত নতুন ট্রেন চালানো হবে। আমরা চাইছি আদ্রা থেকে বাঁকুড়া, মশাগ্রাম হয়েই নতুন ট্রেনটি শুরু হোক।’’ আশায় ব্যবসায়ী মহল থেকে ছাত্রেরাও। পাত্রসায়রের ব্যবসায়ী মনোহর কর্মকার বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে মালপত্র আনার খরচ ও সময় দু’টোই কমবে।” ছাত্র অর্ক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কলকাতার কোন কেন্দ্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোচিং নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফেরাও এ বার সম্ভব হবে।’’
তথ্য সহযোগিতা: তারাশঙ্কর গুপ্ত