ইদের খুশি দাগ কাটতে পারেনি মিহিলাল শেখের মনে। —নিজস্ব চিত্র।
খুশির ইদ। উৎসব পালিত হল নিয়ম মেনেই। কিন্তু উৎসবের দিনে সেই খুশির বিন্দুমাত্র ছাপ দেখা গেল না বগটুইতে। কেউ ভেঙে পড়লেন প্রিয়জনকে হারানোর শোকে। কেউ বা চাইলেন অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি।
মঙ্গলবার ইদ। উৎসবের আলোতেই বগটুই যেন নিষ্প্রভ। এ বারের উৎসব ইদ জৌলুসহীন। রাস্তাঘাটে জনমানব নেই। গ্রামের মসজিদ বাদ দিলে সর্বত্র নিস্তব্ধতা। অন্যান্য বার গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেও এ বার তা বন্ধ। দিন কয়েক আগেই হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে আতাহার বিবির। বগটুইয়ের অগ্নিকাণ্ডে জখম হয়ে মাসাধিক কাল হাসপাতালে ছিলেন তিনি। তাঁর মেয়ে নুরউন্নিসা মায়ের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভে পেটে পড়লেন। তাঁর কথায়, ‘‘আগের বার ভাল ইদ কাটিয়েছিলাম। মা জীবিত ছিল। সকলে ছিল। এ বার কেউ নেই। বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখেই ইদ পালন করছি। না হলে এটা আমাদের উৎসবের সময় নয়। আমি চাই, যারা আমার মাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের ফাঁসি হোক। যে দিন ফাঁসি হবে সে দিন আমরা খুশির ইদ পালন করব।’’
নুরউন্নিসার মতো অবশ্য ক্ষোভের সুর শোনা গেল না মিহিলাল শেখের গলায়। শান্ত কণ্ঠে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইদ আমাদের বড় উৎসব। আজ খুশির দিনে গোটা বিশ্ব যখন মেতে উঠেছে। কিন্তু আমরা এখন সর্বহারা, মর্মাহত এবং দুঃখে বেদনায় আছি। কারণ আমাদের পরিবার চোখের সামনে পুড়ে মারা গিয়েছেন। সব সময় ওই ঘটনা আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। কী ভাবে এই খুশির দিন পালন করব? আমরা দুঃখেই ইদ পালন করছি। আমি চাই, এমন নির্যাতন যেন আর না হয়। সকলে যেন সুখে-আনন্দে জীবন কাটাতে পারেন এই কামনাই করি।’’
একই সুর বগটুই অগ্নিকাণ্ডে স্বজন হারানো শেখলালের গলাতেও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইদ পালন করলাম দুঃখ নিয়ে। আমরা স্বজনহারা। সেই ব্যথা আমরা ভুলতে পারছি না। ইদ কষ্টেই কাটছে। এমন যন্ত্রণা যেন কাউকে সহ্য করতে না হয়।’’