পুলিশের ঘেরাটোপে বগটুই গ্রাম। ছবি: পিটিআই।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই তৎপর হয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতভর চলেছে পুলিশি টহলদারি। কিন্তু গ্রামবাসীদের অধিকাংশই এখনও বাড়ি ফেরেননি। কার্যত জনশূন্য গ্রামেই নিরাপত্তা নজরদারি চালাতে হয়েছে পুলিশকে।
বৃহস্পতিবার বীরভূমের বগটুইয়ের গণহত্যাস্থলে গিয়ে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের তোলা গাফিলতির অভিযোগে সায় দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি দেন উপযুক্ত পদক্ষেপের। ঘটনাচক্রে, এর পরেই পর পর সাসপেন্ড করা হয়েছে রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) সায়ন আহমেদকে। গ্রেফতার করা হয় ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত, রামপুরহাট-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেনকে।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বাগটুইবাসীর নিরাপত্তার জন্য এক জন ডিএসপি নেতৃত্বে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের একটি ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন হয়েছে। রাতের টহলদারির নেতৃত্বেও ছিলেন ওই ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের জেরে গ্রামের বিভিন্ন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ স্থানে কয়েক ডজন সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।
সোমবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের খুনের পরেই অগ্নিগর্ভ রামপুরহাটের হয়ে ওঠে বগটুই গ্রাম। রাতে গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ১০টি বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মহিলা, শিশু-সহ আট জন নিহত হন।
বগটুই গ্রামের মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে রাস্তা। তার এক পাশে পূর্বপাড়া। পশ্চিমপাড়া অন্য পাশে। পূর্বপাড়াতেই বাড়ি ভাদুর। তাঁকে খুনে অভিযুক্তদের বাড়ি পশ্চিমপাড়ায়। দুই পাড়ার সীমানায় তৈরি হয়েছে একটি পুলিশ ক্যাম্প। ভাদুর খুনের পরে সোমবার রাত থেকেই পশ্চিমপাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দা বাড়ি ছেড়েছিলেন। সে রাতে সোনা শেখের বাড়িতে আগুনে পুড়িয়ে সাত জনকে খুনের পর মঙ্গলবার জনশূন্য হয়ে গিয়েছে পূর্বাপাড়াও। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরেও গ্রামে ফিরতে তাঁরা ভরসা পাচ্ছেন না বলে রামপুরহাট শহরে আশ্রয় নেওয়া এক বগটুইবাসী শুক্রবার জানিয়েছেন।
আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হলেও এই ঘটনার জের দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে মনে করছেন জেলার পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই। তাই জনশূন্য বগটুইতে এখনই বন্ধ হচ্ছে না রাতের টহলদারি।