স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতার নির্দেশের পরেই তড়িঘড়ি তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর থেকে রাজ্য জুড়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের বার্তা পেয়েই বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে অভিযান পুলিশি অভিযান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ পেয়েছে পুলিশ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তাঁর ১১ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বে এমন নজির খুব একটা নেই। ৩০ দিনের মধ্যে তিনটি পৃথক ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মী এবং অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে যিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনেকে মনে করছেন সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তাঁর দ্বিতীয় পরিচয়টাকেই ক্রমশ সামনে নিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার দিনভর সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতাকেই দেখেছে রাজ্য। বীরভূমের বগটুইয়ের গণহত্যাস্থলে গিয়ে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের তোলা গাফিলতির অভিযোগে সায় দিয়েছেন তিনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপযুক্ত পদক্ষেপের। ঘটনাচক্রে, এর পরেই পর পর সাসপেন্ড করা হয়েছে রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) সায়ন আহমেদকে।
শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতার নির্দেশের পরেই তড়িঘড়ি তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর থেকে রাজ্য জুড়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের বার্তা পেয়েই বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে অভিযান পুলিশি অভিযান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ পেয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র।
বৃহস্পতিবার বিকেলেই ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষকে যাবতীয় দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসডিপিও-কে ওই থানা সামলাতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনার নেপথ্যেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘বার্তা’ রয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, ঝালদা পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনায় থানার আইসি সঞ্জীবের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে অভিযোগ করে আসছিলেন মৃতের পরিবার। এর পর তপনের ভাইপো মিঠুন কান্দুর সঙ্গে সঞ্জীবের ফোনে কথোপকথনের অডিয়ো ভাইরাল হয় (সেই অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। যা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বেঁধেছিল।
এর আগে হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খানের খুনের পর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতার নির্দেশে সাসপেন্ড করা হয়েছিল স্থানীয় থানার এএসআই নির্মল দাস এবং কনস্টেবল জিতেন্দ্র হেমব্রমকে। আনিস-হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা এবং সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যকে। আমতার ওসি দেবব্রত ভট্টাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই স্বরাষ্ট্র তথা পুলিশ দফতর নিজের হাতে রেখেছেন মমতা। অতীতে বীরভূমে কয়লাখনির জমি অধিগ্রহণ ঘিরে আদিবাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া বা মালদহে রাজনৈতিক খুনে জড়িতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের মতো কিছু উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে আইনজীবীদের বড় অংশই মনে করছেন, সাধারণ ভাবে খাকি উর্দিধারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেননি মমতা। কিন্তু এ বার সেই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
নবান্নের একটি সূত্রে দাবি, পুরভোট পরবর্তী পর্যায়ে পুলিশ দফতরের কাজ নিয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছেন মমতা। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র তরফে ধারাবাহিক ভাবে রাজ্য জুড়ে অরাজকতার দাবি তোলা হচ্ছে। তার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের গলাতেও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীর কাছে ‘রাজকতার বার্তা’ দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাই সচেতন ভাবেই সক্রিয় করে তুলেছেন নিজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সত্তা।