নতুন জল প্রকল্পের পাইপলাইন কোথায় বসবে, পুরসভা তা এখনও ঠিক করতে পারেনি। —প্রতীকী চিত্র।
‘অম্রুত প্রকল্পে’ সিউড়ি শহরের বাড়িতে বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার জল প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে সম্প্রতি। বোলপুর পুরসভা এলাকাতেও এই প্রকল্পের কাজ জোর কদমে চলছে। কাজ শুরু হয়েছে রামপুরহাট, সাঁইথিয়ায়। ব্যতিক্রম দুবরাজপুর ও নলহাটি পুর-শহর।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, নলহাটি পুরসভায় বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখন দরপত্র ডাকার অপেক্ষা। কিন্তু, ডিপিআর-ই এখনও চূড়ান্ত হয়নি দুবরাজপুর পুরসভায়। দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘সুডা-নির্দিষ্ট একটি সংস্থা এই কাজের দায়িত্বে। ডিপিআর তৈরি করেছিল সংস্থা। তবে, শহরের ১ ও ১১নম্বর ওয়ার্ডে যে দু’টি ওভারহেড রিজার্ভার থেকে জল সরবরাহ করা হবে, নকশায় সেগুলির জলধারণ ক্ষমতা খুব কম থাকায় জলধারণের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বলেছি।’’
প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আর্বান ট্রান্সফরমেশন বা ‘অম্রুত প্রকল্পে’ চলতি বছরের গোড়ায় নিখরচায় ৩৭০০ বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল দুবরাজপুর পুরসভার। তার জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু, সেটা সম্ভব হয়নি, পরিস্রুত জলের পর্যাপ্ত জোগান না-থাকায়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে যে দু’টি জলপ্রকল্প রয়েছে, তার উপরে ভরসা করে গোটা শহরে পরিস্রুত পানীয় দলের সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে মেটেনি। এই অবস্থায় ৩৭০০ সংখ্যক জলের সংযোগ দেওয়া যাবে না-বুঝেই কাজ আটকে গিয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে পর্যাপ্ত পানীয় জলের জোগান নিশ্চিত করতে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অম্রুত’-এর অধীনেই নতুন করে আরও একটি একটি জল প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। জেলার অন্যান্য পুরসভার মতো দুবরাজপুর পুরসভায়ও সে কাজ হবে। কিন্তু, এখনও বিষয়টি ডিপিআর তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। দুবরাজপুরের পুরপ্রধানের দাবি, একবার জলপ্রকল্প তৈরি হলে তার পরে অন্তত দু’দশক আর নতুন করে কোনও প্রকল্প পাওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট সংস্থা নকশায় দু’টি ওভারহে়ড ২০০ থেকে ৩০০ ঘনমিটার জলধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন দেখিয়েছিল। তাতে ক্রমশ বাড়তে থাকা শহরের জলের চাহিদা পুরণ সম্ভব নয়। ফলে ডিপিআর চূড়ান্ত হয়নি। শীঘ্রই সেই কাজ হয়ে যাবে বলে পুরপ্রধানের আশা।
পুরসভার তথ্য বলছে, দুবরাজপুরে ২০০৩ সালে একটি জল প্রকল্প চালু হলেও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয়নি। সেই বদনাম ঘোচাতে পুরসভা দ্বিতীয় জল প্রকল্পে হাত দেয় ২০১৪ সালে। তার পরেও ১, ২, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু অংশে জল পৌঁছয়নি। বাকি এলাকায় কিছু স্ট্যান্ড কল দেওয়া হলেও সব বাড়িতে জল যায়নি। ওই দু’টি প্রকল্পই অজয় নদের উপরে নির্ভরশীল। আবার নতুন জল প্রকল্পেও অজয় নদের উপরেই ভরসা করতে হবে দুবরাজপুর পুরসভাকে। জানা গিয়েছে, অজয় লাগোয়া রতনপুর মৌজার পাম্প হাউস থাকছে। সেখানে থেকে জল পরিস্রুত করে ইপলাইনের মাধ্যমে প্রায় ১৭ কিমি দূরের নতুন দুই ওভারহেড জলাধারে তোলা হবে। সেখান থেকেই শহরে সরবরাহ করা হবে।
তবে, অজয় থেকে পাইপলাইন কোন পথে নিয়ে আসা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, জাতীয় সড়ক চার লেনে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগের দু’টি জলপ্রকল্পে জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁষে পাইপলাইন রয়েছে। ফলে ওই পাইপলাইন সরাতে হবে। নতুন জল প্রকল্পের পাইপলাইন কোথায় বসবে, পুরসভা তা এখনও ঠিক করতে পারেনি।