রুজি: এমন ছবি দেখা যায় প্রায়ই। নিজস্ব চিত্র
আজ শিশু দিবস। প্রতি বছরের মতো এ বছরও দিনটি সাড়ম্বরে পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে টানা তিন দিন চলবে নানা অনুষ্ঠান। জেলার বিভিন্ন স্কুল ও হোমের শিশুদের নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ— এমন নানা অনুষ্ঠান থাকছে। পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকছে। কোথায়, কী ভাবে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে তিন মহকুমা জুড়ে স্টলও করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রশাসনের এমন প্রচার-উদ্যোগের মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে, জেলায় শিশুদের অধিকার কি সুরক্ষিত? প্রশাসনের কাছে থাকা পরিসংখ্যান ও তথ্যই অন্তত সে কথা বলছে না। ইটভাটা থেকে চায়ের দোকান, গ্যারাজ— শিশুশ্রমিকের সংখ্যা তেমন কমেনি। বাল্যবিবাহও হচ্ছে আকছার। সেই সঙ্গে শিশুদের উপরে অত্যাচার, যৌন হেনস্থার মতো শিশু অধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ঘটছে জেলাজুড়েই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্যই বলছে, ১৮-১৯ অর্থবর্ষে বাল্য বিবাহ আটকানো হয়েছে প্রায় ৩০০টি। এ বছরের অর্থবর্ষে (এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) পর্যন্ত বাল্য বিবাহ রোখা হয়েছে অন্তত দেড়শোটি। আরও উদ্বেগের বিষয়, যে নাবালিকা বিয়েগুলি আটকানো যায়নি, তার সংখ্যাটা অনেক বেশি। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অত্যাচার নিপীড়ন, যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে দুশোরও বেশি শিশু। নিখোঁজ ২৫টি শিশু। শিশুশ্রম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৬ জন শিশুকে। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্তি দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ জনকে।
অথচ শিশু অধিকার রক্ষায় নানা আইন রয়েছে। রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন কমিটিও। তা সত্ত্বেও কেন এখনও শিশুদের যন্ত্রণার চেনা ছবি কেন তেমন বদলায় নি, কেন আইনের সফল রূপায়ণ হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা স্তরে তো এই কাজ দেখভাল করার জন্য সমাজকল্যাণ দফতর রয়েছেই। তার অধীনে রয়েছে বিশেষ সেল ‘শিশু সুরক্ষা কার্যালয়।’ মোটের উপর এ সব দেখভালের জন্য দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে ‘চাইল্ড লাইন’কে। লাগাতার এই নিয়ে প্রচার অভিযান চলে। তারপরও শিশুর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যে ঘটেই চলেছে তার প্রমাণ মিলছে পরিসংখ্যান থেেকই। জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ অবশ্য বলছেন, ‘‘বাল্যবিবাহ, নিপীড়ন-সহ শিশু অধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানে কিন্তু সবটাই নেতিবাচক নয়, বরং ইতিবাচক। সচেতনতা বেড়েছে বলেই শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বেশি করে সামনে আসছে।’’
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মতো বীরভূমেও একাধিক ইটভাটা, ছোট ছোট কারখানায় শিশু শ্রমিকদের দেখা যায়। শিশু শ্রমিকেরা কাজ করে বেড়ায় দোকানে-হাটে-বাজারে। শুধু শিশুশ্রম নয়, বাল্যবিবাহ, পাচার, নিঁখোজ হয়ে যাওয়া, নিপীড়ন, যৌন হেনস্থা-সহ নানাভাবে লঙ্ঘিত হয় শিশুর অধিকার। প্রশাসনের দাবি, এমন প্রতিটি ঘটনার তথ্য পেতে জেলাস্তর, ব্লক স্তরে কমিটি তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি সংসদে ও পুর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশু সুরক্ষা সমিতি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শিশুর অধিকার সুরক্ষিত করাই এর লক্ষ্য। বীরভূমে তা হয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে খবর।
তবে সমস্যা কোথায়? প্রশাসন জানাচ্ছে, বীরভূমে জেলা স্তরের কমিটি ছাড়া জেলার ১৯টি ব্লকে ২২৪৩টি গ্রাম সংসদে ও ৬টি পুরসভার ১০৫টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠিত হয়েছে। গ্রাম সংসদ ও পুর ওয়ার্ডের কমিটির মধ্যে রয়েছেন পুর বা পঞ্চায়েত প্রধান। রয়েছেন এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, চাইল্ড লাইনের কর্মী। রাখা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি অভিভাবক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও। নানাভাবে শিশুর অধিকার লঙ্ঘনের তথ্য সহজে পেতেই এই উদ্যোগ। তবে কী ভাবে কাজ করতে হবে, কার কী দায়িত্ব, এই বিষয়ে হল ব্লক বা পুর ওয়ার্ডে কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ হলেও ২২৪৩টি গ্রাম সংসদেগঠিত কমিটির প্রশিক্ষণ এখনও হয় নি। তাই একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে যে পরিমাণ খবর আসার কথা সেটা আসছে না। জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক বলছেন, ‘‘প্রতিটি গ্রাম সংসদ স্তরে কমিটিগুলির প্রশিক্ষণ হয়ে গেলেই আরও বেশি করে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সামনে। সেই কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে। প্রশাসন তৃণমূল স্তর থেকে খবর পেয়ে সেইমতো ব্যবস্থাও নিতে পারবে।’’
তথ্যসূত্র: জেলা প্রশাসন