বোলপুর আদালতে আনা হয়েছে পুড়িয়ে খুনে অভিযুক্ত সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনকে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
বোলপুরের নতুনগীত গ্রামে শিশুপুত্র-সহ দম্পতিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনকে অবশেষে বোলপুর আদালতে তোলা হল। ওই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন চন্দনও। মঙ্গলবার আদালতে তোলার পরে চন্দনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে নতুনগীত গ্রামের এক তলা বাড়িতে চার বছরের ছেলে আয়ান আক্তার ও স্ত্রী কেরিমা ওরফে রূপা বিবিকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন পেশায় ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম ওরফে তোতা। গভীর রাতে কোনও এক সময় খোলা জানলা থেকে ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু স্প্রে করে পেট্রল বা কেরোসিন ঢেলে ওই ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাবা-মা-ছেলে ঘুমের মধ্যেই ঝলসে মারা যান। পাশের ঘরে শুয়ে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় আলিমের বড় ছেলে ওয়াসিম আখতার ওরফে রাজ।
এই ঘটনার পরেই ওয়াসিম দাবি করে, এই খুনের পিছনে চেনা লোকের হাত রয়েছে। পুলিশের তদন্তেও উঠে আসে সেই তথ্য। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে নিহত আব্দুল আলিমের ভাইয়ের স্ত্রী নাজনি নাহার বিবি ওরফে স্মৃতি এবং তাঁর প্রেমিক সফিকুল ওরফে চন্দনকে। আলিমের আত্মীয়দের দাবি, স্মৃতির সঙ্গে বেশ কিছুদিন পাশের গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক চন্দনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁদের ওই সম্পর্ক মেনে নেননি আলিম ও রূপা। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে একাধিক বার রূপাকে বলেছিলেন তাঁরা। সেই আক্রোশেই এই হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশের দাবি।
স্মৃতি বর্তমানে জেলে পর্যন্ত রয়েছেন। চন্দনকেও গ্রেফতার করে আদালতে তোলার কথা থাকলেও ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভাল রকম জখম হয়েছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়,জখম অবস্থাতেও চন্দন বেপাত্তা হয়ে যান। মুর্শিদাবাদ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে যাওয়ায় এত দিন অন্য জেলায় একটি হাসপাতালে পুলিশি নজরদারিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন চন্দন। মঙ্গলবার চন্দনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় তাঁকে বোলপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী উদয়কুমার গড়াই বলেন, “অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।” আদালত চত্বরে চন্দন এ দিন কোনও কথা বলতে চাননি। নিহত ব্যবসায়ীর ছেলে ওয়াসিম বলে, “আমার কাকিমা ও তার প্রেমিক, দু’জনেরই রম সাজা চাই।” ওয়াসিম আপাতত শোক ভুলে বাবার ব্যবসার কাজ সামলাতে শুরু করেছে।