রঘুনাথপুর ২ ব্লকের কমিউনিটি হলে ধান কেনার শিবির। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলার প্রান্তিক চাষিদের কথা মাথায় রেখে ললাট ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বাড়াল জেলা প্রশাসন।
এত দিন এক জন চাষির কাছ থেকে খাদ্য দফতর ২০ শতাংশ ললাট ধান কিনত। এ বার থেকে এই প্রজাতির ধান সংগ্রহের মাত্রা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৩ শতাংশ করা হয়েছে। শুক্রবার খাদ্য দফতর, জেলার চালকল মালিকদের প্রতিনিধি ও ধান কেনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম, বেনফেড প্রভৃতি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা পরিষদের খাদ্য সরবরাহ বিষয়ক দফতরের কর্মাধ্যক্ষও এই বৈঠকে হাজির ছিলেন।
বৈঠকের পরে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজমদার বলেন, ‘‘এই জেলায় চাষিদের কাছ থেকে ললাট ধান কেনা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। আমরা প্রান্তিক চাষিদের কথা মাথায় রেখে এ বার ললাট ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছি। কোনও চাষি যদি শুধু ১৫ কুইন্টাল ললাট ধান নিয়ে আসেন, তাহলেও সেই চাষির কাছে সব কিনে নেওয়া হবে।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পুরুলিয়ায় মোট ধানের অন্তত ৩০ শতাংশ ললাট প্রজাতির ধানের চাষ হয়। ললাটের পাশাপাশি মূলত স্বর্ণ প্রজাতির ধানের চাষ করেন তাঁরা। এমনও অনেক প্রান্তিক চাষি আছেন, যাঁরা আবার শুধু ললাট ধানেরই চাষ করেন। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ললাট ধানে যেহেতু মুড়ি ভাল হয়, তাই অনেকেই এই প্রজাতির ধানের চাষ করেন।
গত মরসুমে সরকারি ধান্যক্রয় কেন্দ্রের একাধিক শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, সেখানে ললাট ধান কেনা হচ্ছে না। জেলার বিরোধী বিধায়ক নেপাল মাহাতোও চাষিদের এই অভিযোগকে সমর্থন করে দাবি তোলেন, প্রশাসনকে ললাট ধান নিতে হবে। তাঁর অভিযোগ ছিল, যে সব চাষি ললাট প্রজাতির ধান বেশি চাষ করেন, তাঁদের ধান কি সরকার কিনবে না? সরকার যদি না কেনে, তা হলে তাঁরা কোথায় বিক্রি করবেন?’’ এই প্রশ্নে গত মরসুমে ক্ষোভ দানা বেধেছিল।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত জেলার চালকল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, ‘‘আগে চাষিরা যত ধান বিক্রির জন্য নিয়ে আসতেন, তার ২০ শতাংশ ললাট ধান নেওয়া হত। ললাট প্রজাতির ধান এর বেশি নিলে আমাদের লোকসানে পড়তে হয়।’’ তিনি জানান, খাদ্য দফতর তাঁদের এক কুইন্টাল ধান দিলে ৬৮ কেজি চাল বুঝে নেয়। যেহেতু ললাট মোটা ধান, তাই এই প্রজাতির এক কুইন্টাল ধানে ৫৮ কেজির বেশি চাল পাওয়া যায় না। মনোজবাবু বলেন, ‘‘এ দিন জেলাশাসক আমাদের জেলার প্রান্তিক চাষিদের কথা মাথায় রেখে ললাট ধান আরও কিছুটা পরিমাণ বাড়াতে বলেছেন।’’
তিনি ব্যাখ্যা দেন, এক জন চাষি সর্বাধিক ৪৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারেন। এতদিন এই পরিমাণ ধানের মধ্যে ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৯ কুইন্টাল ললাট ধান নেওয়া হত। এ দিনের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে, এক জন চাষির কাছ থেকে সর্বাধিক ১৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ললাট ধান নেওয়া যাবে। বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা চালকল মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পুরুলিয়ায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টন। জেলা খাদ্য নিয়ামক শুভ্রজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিসেম্বর থেকে জেলায় ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সাত হাজার ২৫০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।’’