পানায় ঢেকেছে সাহেববাঁধ। —ফাইল চিত্র।
যন্ত্রের সাহায্যে সাহেববাঁধ থেকে কচুরিপানা তোলার কাজের সূচনা অনুষ্ঠান পুরুলিয়ার পুরপ্রতিনিধিদের একাংশের বাগ্বিতণ্ডায় তেতে উঠেছিল। তারপরে প্রায় আড়াই মাস কেটে গেলেও সেই যন্ত্রে পানা তোলা হয়নি। বরং বাঁধ প্রায় পুরোটাই পানায় ঢাকা পড়েছে। অগত্যা সম্প্রতি সেই লোক লাগিয়েই কচুরিপানা তোলার কাজ শুরু করেছে পুরুলিয়া পুরসভা।
সাহেববাঁধকে বলা হয় পুরুলিয়া পুরসভার ফুসফুস। প্রতিবছর শীতকালে এখানে ঝাঁক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি আসত। তা দেখতে ভিড় করতেন অনেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পানায় ঢাকা থাকছে সাহেববাঁধ। সেই সঙ্গে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনাও কমতে শুরু করে। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, এ বছর বাঁধ পানায় ঢেকে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখিরাও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
পুরসভা মাঝে মধ্যে লোক লাগিয়ে বাঁধ থেকে পানা তোলার কাজ শুরু করলেও পুরোপুরি পানা মুক্ত করতে পারেনি। আর্থিক সঙ্কটে থাকা পুরসভার পক্ষে এই কাজ চালিয়ে যাওয়া মাথা ব্যথা হয়ে উঠেছে।
তাই দ্রুত পানা তোলার জন্য একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় হায়দরাবাদ থেকে নিয়ে আসা হয় সৌরশক্তিচালিত একটি যন্ত্র। কিন্তু গোড়াতেই সমস্যা দেখা দেয়। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুনয় কবিরাজ বলেন, ‘‘যন্ত্রটির উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ। সৌরবিদ্যুতেও চলছে না, ব্যাটারি দিয়েও কাজ হচ্ছে না।’’
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন, ‘‘ওই যন্ত্রে ত্রুটি রয়েছে। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। সেটি পুরুলিয়া পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘যন্ত্রটি জেলা পরিষদ একটি ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় আমাদের দিয়েছিল। কিন্তু সেটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালানোর দিনই দেখা যায়, তা কচুরিপানা পরিষ্কার করতে পারছে না। তাই আমরা সম্প্রতি লোক দিয়েই পানা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই সাহেববাঁধ পানা মুক্ত করা যাবে।’’
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘জেলাবাসীর দাবির কথা মাথায় রেখে পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করে সাহেববাঁধ পরিষ্কার করানো হচ্ছে। এতে আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।’’
পুরসভা আগেও লোক লাগিয়ে পানা তোলার কাজ করেছে। এ বারও নেমেছে। এতে কি সত্যিই সাহেববাঁধকে পানা মুক্ত করা যাবে— প্রশ্ন অনেকের।
প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি সোহেল দাদ খানের অভিযোগ, ‘‘সাহেববাঁধে এত পানা আগে কোনও দিন ছিল না। লোক দেখাতে ওই যন্ত্র আনা হয়েছিল।’’
১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সত্যজিৎ অধিকারী বলেন, ‘‘সাহেববাঁধ আমাদের গর্ব ছিল। এখন এমন অবস্থা যে কোনও সময়েই পরিষ্কার থাকছে না।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সাহেববাঁধ নিয়ে জেলা প্রশাসন যেমন উদাসীন, তেমনই নাগরিক সমাজও। শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ সবাই এখন মোবাইল ফোনেই ব্যস্ত। অথচ এক সময় পুরুলিয়া শহরের মানুষকে এই জলাশয়ের জলই বাঁচিয়ে রেখেছিল। এই উদাসীনতাই কি তার প্রতিদান?’’