নাম ঘোষণা হতেই তরজা

বছরখানেক ঝুলে থাকার পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়া জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতি গঠন করা হয়। মোট ৪৫টি আসনের বাটোয়ারা হয় তৃণমূলের ২৮ জন সদস্যের মধ্যে। কিন্তু ওই দিন ছিল ‘ট্রায়াল’। 

Advertisement

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১০
Share:

সরগরম: জেলাপরিষদের সভাধিপতির ঘরে। ছবি: সুজিত মাহাতো

কুর্সির দৌড়ের ‘ফাইনাল’ ছিল বৃহস্পতিবার। যা ঘটল, তা সংক্ষেপে এ রকমের: দুপুরে মুখবন্ধ খাম খোলা হল পুরুলিয়া জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে। ৯টি স্থায়ী সমিতির ৯ জন কর্মাধ্যক্ষের নাম ঘোষণা করা হল। জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমরা সবাই কর্মাধ্যক্ষ, সবাই সভাধিপতি। এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।’’ আর বিকেলেই জেলা তৃণমূলের হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে দু’টি স্থায়ী সমিতির সদস্য হিসাবে থাকা ঝালদা ২ ব্লক থেকে জিতে আসা রমেশ সিং ঘাটোয়াল ‘পদত্যাগপত্র’ পোস্ট করলেন।

Advertisement

বছরখানেক ঝুলে থাকার পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়া জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতি গঠন করা হয়। মোট ৪৫টি আসনের বাটোয়ারা হয় তৃণমূলের ২৮ জন সদস্যের মধ্যে। কিন্তু ওই দিন ছিল ‘ট্রায়াল’।

জেলা পরিষদ গঠনের পরে কর্মাধ্যক্ষের কুর্সি নিয়ে জলঘোলা হয়েছে অনেক। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের আসনের দাবিদার ছিলেন সব থেকে বেশি। স্থায়ী সমিতি গঠনের পরে বোঝা যায়, শেষ পর্যন্ত দৌড়ে টিকে রয়েছেন তিন জন। শেষ পর্যন্ত পূর্তকার্য ও পরিবহণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষের আসনটি পেয়েছেন জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা হলধর মাহাতো।

Advertisement

সূত্রের খবর, বেলা ১২টা নাগাদ তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলার পর্যবেক্ষকদের প্রতিনিধি এসে একটি মুখবন্ধ খাম দিয়ে যান দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর হাতে। জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে এসে শান্তিরামবাবু সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে খামটি ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান। তার পরেই এক একটি করে নাম ঘোষণা হয়। ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীনেশচন্দ্র মণ্ডল ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়।

প্রথমেই ঘোষণা করা হয় পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের নাম। তার পরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পদে হুড়ার সৌমেন বেলথরিয়ার নাম। তার পরে মীরা বাউড়ির নাম, কৃষি ও সেচ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পদে। হলধরবাবু বলছেন, ‘‘স্থায়ী সমিতি গঠনে দেরি হওয়ায় অনেক কাজে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। সে সবে গতি আনাটাই মূল লক্ষ্য।’’

স্থায়ী সমিতি গঠনের আগে যেমন সমস্ত সদস্যকে সদরের হোটেলে এনে রাখা হয়েছিল, এ দিন অবশ্য তেমন হয়নি। তবে, চাপা উত্তেজনা ছিলই। জেলা নেতাদের ফোন সকাল থেকেই ক্রমাগত বেজে উঠেছে। সাংবাদিকদের থেকে আগাম কোনও খবর মেলে কি না, সেই চেষ্টাও করছিলেন কেউ কেউ।

কর্মাধ্যক্ষের কুর্সির দখল নিয়ে জল গড়াতে গড়াতে অগস্টের শেষে তৃণমূলের দুই জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক ও শুভেন্দু অধিকারীর কাছে গিয়েছিল। তাঁরা জেলা নেতৃত্বকে নাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে শান্তিরামবাবু দাবি করেছেন, শেষ পর্যন্ত রাজ্য থেকেই নাম এসেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তাল কাটল।

এ দিন বিকেলে তৃণমূলের ঝালদা ২ ব্লক এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য রমেশ সিং ঘাটোয়াল দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হাতে লেখা একটি চিঠি পোস্ট করেন। তাতে তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে উদ্দেশ করে লেখা, ‘‘দু’টি স্থায়ী সমিতিতে নাম ছিল। শিক্ষা ও বিদ্যুৎ। কিন্তু একটিতেও কর্মাধ্যক্ষ না হওয়ায়, আমি বুঝতে পারছি রাজনৈতিক শিকার হয়েছি।’’ এর পরেই স্থায়ী সমিতির সদস্যপদে ‘ইস্তফার’ কথা জিনিয়েছেন রমেশবাবু।

শান্তিরামবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি খবর নিয়ে দেখছি।’’ তবে রমেশবাবু এ দিন ফোনে আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘প্রভাবশালীদের নাম কর্মাধ্যক্ষ পদে দেখলাম। স্বজনপোষণ হয়েছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে রাজনীতি করি। পদের মোহ নেই। এলাকার মানুষের উন্নয়ন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম বলে স্থায়ী সমিতিতেই থাকতে চাইছি না।’’ তাঁর দাবি, সোমবার জেলাশাসকের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেবেন।

এই পরিস্থিতিতে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বজনপোষণ তো তৃণমূলের নতুন ঘটনা নয়। যাঁরা এত দিন ধরে দলে রয়েছেন, কালে কালে তাঁদের মোহভঙ্গ হচ্ছে। এটাও তেমনই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement